আমার ছোট বেলার অনেক কথা মায়ের কাছে শোনা। মায়ের কাছে শুনেছি আমি সিঙ্গুর হাসপাতালে বাংলার ১৩৭৪বা ১৩৭৫ সালের মাঘ মাসের শেষ বুধবার সকালে না রাতে বলে ছিল মনে নেই তবে আমি ১০ টা ৩০ মিনিটে জণ্ম গ্রহণ করে ছিলাম। আমাদের বাড়ি টা ছিল সিঙ্গুর থানার অন্তর্গত পল্তাগড় গ্রামে মাটির বাড়ি পেটোখোলার ছাউনি, টিনের দরজা। আমরা চার ভাই বোন আমার দিদি বড়ো তার পর আমি আমার পরে দু ভাই। আমার বাবা সুশীল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল সাব ডিভিশনের অর্ন্তগত গৌরনদী উপজিলার নলচিরার বাসিন্দা ছিলেন। তখন নলচিরা ছিল বাখরগঞ্জের গৌরনদী থানার অন্তর্গত ।এখন কী নাম হয়েছে জানা নেই। আমার পিতা ভারত স্বাধীন হবার আগেই এপার বাংলায় এসেছিলেন এবং সিঙ্গুর থানার অন্তর্গত পল্তাগড় গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ।তিনি বিরামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। আমার পিতামহের নাম ছিল উপেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার পিতামহীর নাম ছিল ননীবালা দেবী। আমার বাবার কাছে যে দলিল পরচা ছিল সেগুলি তে আরও কতগুলি নাম আছে তারা কারা আমার জানা নেই। যেমন ১)ধীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ২)নরেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়েরধ্যায় ৩)বামা সুন্দরী দেবী
৪)গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৫)মুকুন্দ চক্রবর্তী
৬)দুর্গাপদ ভট্টাচার্য ৭)ক্ষীরোদসুন্দরী দেবী এদের কার সাথে কী সম্পর্ক আমার জানা নেই। তবে এদের কারো কারো নামের নীচে থানা - গৌরনদী নলচিরা সাং - কান্ড পাশা লেখা আছে। বাবার কাছে শুনেছি বাবার মামা ধীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ফৌজদারি কোর্টের উকিল ছিলেন। এতো কথা লিখছি কেন? যদি কেউ আমার ব্লগের লেখা পড়েন আমার পিতার সম্পর্কের কেউ এদেশে বাংলাদেশ থাকেন তবে command box এ মন্তব্য লিখবেন। কেন আমি আগেও চেষ্টা করেছি পিতার সম্পর্কের কেউ আছে কিনা। আমি শুধু জানতে চাই বাবা কেন দেশ স্বাধীন হবার আগেই এপার বাংলায় এসেছিলেন, এবং প্রায় কপর্দক শুন্য অবস্হায়। এখানে বলি যে আমি সম্পত্তির অধিকার পাব বলে খোঁজ করছি, তা কিন্তু নয়। এটি নিছক কৌতুহল।
আমার কথা না বলে কেমন বাবার কথা বলে ফেললাম, তবে হ্যাঁ বাবা মা ছাড়া কেউ পৃথিবীতে আসতে পারে না। তাই বাবার কথা হল, দরকার হলে আবার লিখব। এবার মায়ের কথা একটু লিখতে হবে, কারণ আমার মায়ের কথা না বললেই নয় কারণ আমার মা না হলে আমি আজ এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমার জন্য মা নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছেন। আমার এক কূলাঙ্গার ভাই এর হাতে। মা আমাদের অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন, মাকে আমরা পেয়ে ছিলাম অন্য ভাবে। তিনি জীবনের প্রতিদিন যুদ্ধ করে গেছেন। সুখ ভোগ করতে হয় নি। মায়ের সেই কষ্টের দিন গুলো আমি ভুলতে পারি না। কী অমানুষিক দুঃখ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হতো। বাবা নামেই চাকরি করতেন, আমরা অর্ধেক দিন খেতে পাইনি।কারণ তখন শিক্ষক দের বেতন কম ছিল আর অনিয়মিত ছিল, আর একটি কারণ আমার বাবার অপরিনাম দর্শিতা, আর একটি কারণ হল দোকান দারের চালাকি। কত বেতন জেনে নিয়ে ঠিক ঐ টাকা পর্যন্ত মাল দিত আবার বাড়তি দাম নেওয়া, ও জিনিস না এলেও ধারের খাতায় তা লিখে দেওয়া, এভাবে পনেরো দিনের মধ্যে বেতনের সবটাকা খরচ দেখিয়ে নিয়ে নেওয়া। আমরা বড়ো হয়ে বাবা কে দোকানে যেতে দিতাম না। আমরা যেতাম আর প্রতি দিন যা লাগতো নিয়ে আসতাম। সেই সময় ওই বেতনে সারা মাস খরচ করেও কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হতে লাগলো।
আমাদের কষ্ট একটু লাঘব হল, তবুও মাকে কারখানায় কাজ করতে যেতে হতো। 1980 সালের পর থেকে অবস্থা উন্নতি হলেও। তার আগের অবস্থা অবর্ননীয়, পরের বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে আনা ফ্যান চেয়ে খাওয়া। কোনো দূরবর্তী স্থানে কোনো সার্বজনীন অনুষ্ঠানে খাওয়ানো হলে, ঠাকুমার হাত ধরে খেতে যাওয়া, সে ট্রেন পথে হলেও চলে যেতাম। জামা কাপড় চেয়ে এনে দিতেন মা। মাঝে মাঝে কিনেও দিতেন, শীতের পোশাক কেনা ছিল অকল্পনীয়। পুরনো বিছানার ছেঁড়া চাদর সেলাই করে কেটে সমান করে গায়ে দিয়েছি। অর্ধেক দিন খাবার জুটত না, তার উপর লেখা পড়ার জন্যে অপরের বই চেয়ে আনা খাতা পেন পেনসিল চেয়ে আনা পেনসিল দিয়ে লিখে মুছে আবার লেখা।
তার উপর ছিল পাড়ার লোকের অত্যাচার তাদের কারো যদি সূঁচও যদি হারিয়ে যেতো সেটা চুরি করেছি আমরা আমাদের ভাঙা ঘরে চলত তল্লাশি আর ভাঙচুর তো ছিল। এসব নিয়ে আরও কিছু কথা লেখা আছে, এর আগে আমার কথা, ও অসত্বিতের সংকট এ দু টো লেখা তে। হয় তো কেউ পড়ে নি। জানি না ভবিষ্যতে কেউ পড়বেন কি না? তবু আমি লিখি আমি ছোট থেকে অনেক নাটক কবিতা লিখে ছিলাম যা এখন অতীত। কারণ সে সব লেখা খাতা এখন আর খুঁজে পাই না। আমার একটা প্রশ্ন মনে দীর্ঘদিন ধরে ঘোরে বাঙাল কী আলাদা কোনো জাত যেমন হিন্দু, মুসলিম, শিখ না হলে এপার বাংলায় শিক্ষিত মানুষ ও বাঙাল জাত বলে সম্বোধন করে কেন? আমি স্কুলে পড়ার সময় আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্য অনেক শিক্ষক বলতেন বাঙাল জাত। আমি পলতাগড় রাধারানী প্রাথমিক এবং পলতাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এখনও অনেক ভালো শিক্ষিত মানুষ কে বাঙাল জাত বলতে শুনেছি। সেই জন্যই আমার মনে প্রশ্ন জাগে ওপার বাংলার মানুষ তথা ওপার বাংলা থেকে বিতাড়িত ভিটে মাটি ছেড়ে আসা মানুষ এপার বাংলায় বাঙাল জাত।
আমার ছোট থেকেই থেকেই আরেক টি প্রশ্ন জাগে, আমার মনে হয় এই প্রশ্ন টি শুধু আমার নয় যেসব মানুষ ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিলেন, আমার বাবার মতো নিস্ব রিক্ত হয়ে, নিজের প্রাণ টুকু হাতে করে, তাদেরও এই প্রশ্ন। এই তথাকথিত বাঙাল জাত তৈরী করল কারা? দেশ স্বাধীন হল, দেশ তিন টুকরো হলো, বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ হলো। হাজার হাজার মানুষের ঘর বাড়ি জ্বলল। কত মানুষের প্রাণ গেল, আমি মনে করি এর জন্যে দায়ী গান্ধী এবং নেহরু এবং জিন্নাহ। ক্ষমতার লোভে তারা দেশ ভাগ করেছেন। এরা সুভাষচন্দ্র বোস থেকে শুরু অন্য বাঙালি নেতা দের সহ্য করতে পারতেন না। আর এই তীব্র জাতি বিদ্বেষ থেকে বাংলা ভাগ এবং সুভাষচন্দ্র বোস কে দেশে ঢুকতে না দেওয়া। এতেই ক্ষান্ত হননি ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষ গুলো কে আশ্রয় দিয়েছেন। আন্দামান এবং দন্ডকারণ্যে কিন্তু বেঁচে থাকার সুব্যবস্থা করেন নি। আমার ভীষণ ঘৃনা হয় তথা কথিত এই সব বড়ো বড়ো দেশপ্রেমিক নেতাদের যারা দেশে প্রেমের নামে ক্ষমতার লোভে একটা জাতির ঐক্য ভেঙে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে। এদের এই কুচক্রী সিদ্ধান্তের ফলে পরিবার গুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, সামাজিক সম্পর্ক গুলো কাকা দাদা পিসি মাসি হারিয়ে তারা দেশ ছেড়ে চলে এসেছে। আবার অনেকর প্রিয়জন দের মরতে দেখেছেন। আর তখন ঐ সব নামি স্বাধীনতা সংগ্রামী ইংরেজ দের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সাজানো জেলে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী সেজে। দেশটাকে ভাগ করে নিয়ে ক্ষমতা ভোগ করতে আরম্ভ করে দিয়ে ছিলেন। তারাই আসলে এই নতুন জাতি অর্থাৎ "বাঙাল জাতি" তৈরী করে দিয়েছে। আর এদের জন্য এখন অনেক রকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়। এমনকি তাদের এপার বাংলায় মেয়ে দের বিবাহ করার অধিকার টুকু নেই। যদিও হয়ে থাকে তবে সেটা অজান্তেই। জেনে সত্যিই বলে যদি বিবাহ হয়। তাহলে অনেক তথ্য গোপন রেখে না হলে কী করে ছেলেটি কে ঠকানো যায় তার ব্যবস্থা পাকা করে রাখে। কেন এতো কথা কারণ আমার বাবাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। নদিয়া জেলার ক্ষীতীশ চক্রবর্তীর মেয়ে যোগমায়া কে, যারা বাংলাদেশের পাবনা জেলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিল। এ তো গেল একটা দিক, আরেকটা দিকও আছে, যেমন ওপার বাংলার থেকে আসা মানুষ ব্রাহ্মণ হতে পারে না। আবার সে যদি আমার বাবার মতো সব হারিয়ে এপার বাংলায় আসে তবে, তিনি ব্রাহ্মণ হলেও ব্রাহ্মণ নন। শুনতে হয় ওপার থেকে এসে গলায় পৈতে ঝুলিয়ে ব্রাহ্মণ হয়েছে। আর মুখের ভাষা হলো শালা বাঙাল বামুন। আমি জানি না এসব কোনো কথা যারা শহরে বাস করেছেন। ওপার থেকে টাকা পয়সা সঙ্গে এনেছেন, তাদের শুনতে হয়েছে কিনা? আমার জানা নেই, কিন্তু ছিন্নমূল, সর্বস্ব হারানো, আত্মীয় স্বজন হারানো, মানুষ গুলো কে প্রতি নিয়ত এপার বাংলার শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষের কাছে অপমানিত হতে হয়েছে। জীবন যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থেকে এসেছে। শুধু ঐ তিন নেতার ক্ষমতা বা গোদির লোভে বা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হবার লোভে। লোভের স্বীকার হতে হয়েছে বাঙালি হিন্দু দের আর পাঞ্জাবের অধিবাসী শিখ দের। এখনো এরা অত্যাচারিত। আমাদের পলতাগড় গ্রামের ভিটেরে সামান্য জমি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে সেই বাবার আমল থেকে। যা আমি আগেই লিখেছি, বাবার আমলে আমি দেখেছি দড়ি দিয়ে জমি মেপে অশান্তি করতে। আমাদের বাড়িতে অনেক রকম ফলের গাছ ছিল। সেসব গাছে ফল হলে এসব হতো। ফল গুলো পেড়ে নিয়ে যেত নষ্ট করে দিত। আর মুখের ভাষা ছিল বাঙাল তাড়াতে হবে। আমিন এনে মাপা হতো তখন ঠিক হতো। একটা কথা বারবার বলতে শুনেছি ওজমি আমাদের নয় দান করা, বাবার কাছে শুনেছি দলিল করার খরচ কমানোর জন্য দানপত্র করা হয়েছিল। সকলেই হয়তো ভাবছেন তোমারা খুব ভালো কিছু বলতে না, শুধু শুধু পেছনে লাগতো। আমারা কি করতাম আগে বলে ছি। ওদেরি কারও কারও চাকর গিরি করতাম একমুঠো মুড়ি খাবার আশায়। যদি একটু ভুল হতো আর আমাদের বাড়িতে পোষা কোনো পশু জমিতে বা বাড়ির আশ পাশে যেতো তাহলে তো কথাই নেই শুরু হয়ে যেতো, ওদের বাঙাল তাড়ানো অভিযান। আমার বাবার আসল নামটাই অনেকেই জানেন না, তিনি হয়ে গিয়েছিলেন। বরিশাল মাস্টার, যদি এলাকায় কোন কেউ ভালো ভাবে বলত, তবে আমার পরিচয় বরিশাল মাস্টারের ছেলে। কারণ বাবা বরিশাল জেলা থেকে এসেছেন বলে।
আমার পঞ্চাশ বছর জীবনের অভিজ্ঞতা। কারণ আমার ব্যক্তিগত জীবনটাই একটা নাটক, হয়তো অনেকর ভালো লাগছে না। কিন্তু কী করি বলুন, আগে অন্য বিষয়ে কিছু লিখেছি। আমার ব্লগে কেউ পড়েছন বলে মনে হচ্ছে না। আমি সবটাই লিখছি আমার ব্যক্তিগত অভিমত অভিজ্ঞতা থেকে। আমার এই দুঃখের কথায় কেউ যদি সুযোগ খোঁজেন কিছু করার নেই। কারোর ভালো লাগছে না। তবে সবটাই সত্যি কথা, কারণ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আর জণ্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতি।যেমন আমি দেখেছি আমাদের পরিবার ছিল রাজনৈতিক দল দ্বারা আক্রান্ত যখন যে দল ক্ষমতায় তখনই সে তার ক্ষমতা দেখিয়েছে। আগেই লিখেছি আমার বাবার বেতন বন্ধ ছিলো 1971 সালে, আবার 1986 থেকে 1988 পর্যন্ত প্রায় দু বছর। অথচ 1986 থেকে 1988 প্রতিদিনই আমি নিজে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছি। পেছনে কারণ সেই রাজনীতির। যাহোক আরও অনেক কিছু লেখার আছে। তবে নীচের পুরনো দলিলের টুকরো অংশ দিলাম যেটি বাংলাদেশের বরিশালের নলচিরা গ্রামের গৌরনদী থানার অন্তর্গত ।আমার বাবার বা আমার বংশ পরিচয় জানার জন্য। এমন কেউ থাকেন যিনি ঐ নাম চেনন। তাহলে আমার ফেসবুকে লিখবেন এই আশায় রইলাম। এর আগেও আমি "আমার কথা" শিরোনামে লিখেছি তবুও যেন শেষ হয় নি। কারণ আগেই বলেছি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতি টি ঘটনা স্মরণীয়। তবে সমাজে ভালো মন্দ মানুষ থাকেন। প্রতিবেশী রা প্রতিবেশী না হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু অনেক ভালো মানুষ ছিলেন না হলে আমরা হয় তো বেঁচে থাকতাম না।যাই হোক বর্তমানে আমার বয়স পঞ্চাশ পার হয়েছে। তাই শিরোনামে আমার পঞ্চাশ বছর, এই পঞ্চাশ বছরের স্মৃতি থেকে আমার এবং আমার পরিবারের সুখ দুঃখের কথা সবার সাথে ভাগ করে নেব। আগেই লিখেছি দুঃখের কথায় মানুষ সুযোগ খোঁজেন। আবার অনেকে অপরের দুঃখে আনন্দ পান।
৪)গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৫)মুকুন্দ চক্রবর্তী
৬)দুর্গাপদ ভট্টাচার্য ৭)ক্ষীরোদসুন্দরী দেবী এদের কার সাথে কী সম্পর্ক আমার জানা নেই। তবে এদের কারো কারো নামের নীচে থানা - গৌরনদী নলচিরা সাং - কান্ড পাশা লেখা আছে। বাবার কাছে শুনেছি বাবার মামা ধীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ফৌজদারি কোর্টের উকিল ছিলেন। এতো কথা লিখছি কেন? যদি কেউ আমার ব্লগের লেখা পড়েন আমার পিতার সম্পর্কের কেউ এদেশে বাংলাদেশ থাকেন তবে command box এ মন্তব্য লিখবেন। কেন আমি আগেও চেষ্টা করেছি পিতার সম্পর্কের কেউ আছে কিনা। আমি শুধু জানতে চাই বাবা কেন দেশ স্বাধীন হবার আগেই এপার বাংলায় এসেছিলেন, এবং প্রায় কপর্দক শুন্য অবস্হায়। এখানে বলি যে আমি সম্পত্তির অধিকার পাব বলে খোঁজ করছি, তা কিন্তু নয়। এটি নিছক কৌতুহল।
আমার কথা না বলে কেমন বাবার কথা বলে ফেললাম, তবে হ্যাঁ বাবা মা ছাড়া কেউ পৃথিবীতে আসতে পারে না। তাই বাবার কথা হল, দরকার হলে আবার লিখব। এবার মায়ের কথা একটু লিখতে হবে, কারণ আমার মায়ের কথা না বললেই নয় কারণ আমার মা না হলে আমি আজ এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমার জন্য মা নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছেন। আমার এক কূলাঙ্গার ভাই এর হাতে। মা আমাদের অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন, মাকে আমরা পেয়ে ছিলাম অন্য ভাবে। তিনি জীবনের প্রতিদিন যুদ্ধ করে গেছেন। সুখ ভোগ করতে হয় নি। মায়ের সেই কষ্টের দিন গুলো আমি ভুলতে পারি না। কী অমানুষিক দুঃখ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হতো। বাবা নামেই চাকরি করতেন, আমরা অর্ধেক দিন খেতে পাইনি।কারণ তখন শিক্ষক দের বেতন কম ছিল আর অনিয়মিত ছিল, আর একটি কারণ আমার বাবার অপরিনাম দর্শিতা, আর একটি কারণ হল দোকান দারের চালাকি। কত বেতন জেনে নিয়ে ঠিক ঐ টাকা পর্যন্ত মাল দিত আবার বাড়তি দাম নেওয়া, ও জিনিস না এলেও ধারের খাতায় তা লিখে দেওয়া, এভাবে পনেরো দিনের মধ্যে বেতনের সবটাকা খরচ দেখিয়ে নিয়ে নেওয়া। আমরা বড়ো হয়ে বাবা কে দোকানে যেতে দিতাম না। আমরা যেতাম আর প্রতি দিন যা লাগতো নিয়ে আসতাম। সেই সময় ওই বেতনে সারা মাস খরচ করেও কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হতে লাগলো।
আমাদের কষ্ট একটু লাঘব হল, তবুও মাকে কারখানায় কাজ করতে যেতে হতো। 1980 সালের পর থেকে অবস্থা উন্নতি হলেও। তার আগের অবস্থা অবর্ননীয়, পরের বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে আনা ফ্যান চেয়ে খাওয়া। কোনো দূরবর্তী স্থানে কোনো সার্বজনীন অনুষ্ঠানে খাওয়ানো হলে, ঠাকুমার হাত ধরে খেতে যাওয়া, সে ট্রেন পথে হলেও চলে যেতাম। জামা কাপড় চেয়ে এনে দিতেন মা। মাঝে মাঝে কিনেও দিতেন, শীতের পোশাক কেনা ছিল অকল্পনীয়। পুরনো বিছানার ছেঁড়া চাদর সেলাই করে কেটে সমান করে গায়ে দিয়েছি। অর্ধেক দিন খাবার জুটত না, তার উপর লেখা পড়ার জন্যে অপরের বই চেয়ে আনা খাতা পেন পেনসিল চেয়ে আনা পেনসিল দিয়ে লিখে মুছে আবার লেখা।
তার উপর ছিল পাড়ার লোকের অত্যাচার তাদের কারো যদি সূঁচও যদি হারিয়ে যেতো সেটা চুরি করেছি আমরা আমাদের ভাঙা ঘরে চলত তল্লাশি আর ভাঙচুর তো ছিল। এসব নিয়ে আরও কিছু কথা লেখা আছে, এর আগে আমার কথা, ও অসত্বিতের সংকট এ দু টো লেখা তে। হয় তো কেউ পড়ে নি। জানি না ভবিষ্যতে কেউ পড়বেন কি না? তবু আমি লিখি আমি ছোট থেকে অনেক নাটক কবিতা লিখে ছিলাম যা এখন অতীত। কারণ সে সব লেখা খাতা এখন আর খুঁজে পাই না। আমার একটা প্রশ্ন মনে দীর্ঘদিন ধরে ঘোরে বাঙাল কী আলাদা কোনো জাত যেমন হিন্দু, মুসলিম, শিখ না হলে এপার বাংলায় শিক্ষিত মানুষ ও বাঙাল জাত বলে সম্বোধন করে কেন? আমি স্কুলে পড়ার সময় আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্য অনেক শিক্ষক বলতেন বাঙাল জাত। আমি পলতাগড় রাধারানী প্রাথমিক এবং পলতাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এখনও অনেক ভালো শিক্ষিত মানুষ কে বাঙাল জাত বলতে শুনেছি। সেই জন্যই আমার মনে প্রশ্ন জাগে ওপার বাংলার মানুষ তথা ওপার বাংলা থেকে বিতাড়িত ভিটে মাটি ছেড়ে আসা মানুষ এপার বাংলায় বাঙাল জাত।
আমার ছোট থেকেই থেকেই আরেক টি প্রশ্ন জাগে, আমার মনে হয় এই প্রশ্ন টি শুধু আমার নয় যেসব মানুষ ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিলেন, আমার বাবার মতো নিস্ব রিক্ত হয়ে, নিজের প্রাণ টুকু হাতে করে, তাদেরও এই প্রশ্ন। এই তথাকথিত বাঙাল জাত তৈরী করল কারা? দেশ স্বাধীন হল, দেশ তিন টুকরো হলো, বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ হলো। হাজার হাজার মানুষের ঘর বাড়ি জ্বলল। কত মানুষের প্রাণ গেল, আমি মনে করি এর জন্যে দায়ী গান্ধী এবং নেহরু এবং জিন্নাহ। ক্ষমতার লোভে তারা দেশ ভাগ করেছেন। এরা সুভাষচন্দ্র বোস থেকে শুরু অন্য বাঙালি নেতা দের সহ্য করতে পারতেন না। আর এই তীব্র জাতি বিদ্বেষ থেকে বাংলা ভাগ এবং সুভাষচন্দ্র বোস কে দেশে ঢুকতে না দেওয়া। এতেই ক্ষান্ত হননি ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষ গুলো কে আশ্রয় দিয়েছেন। আন্দামান এবং দন্ডকারণ্যে কিন্তু বেঁচে থাকার সুব্যবস্থা করেন নি। আমার ভীষণ ঘৃনা হয় তথা কথিত এই সব বড়ো বড়ো দেশপ্রেমিক নেতাদের যারা দেশে প্রেমের নামে ক্ষমতার লোভে একটা জাতির ঐক্য ভেঙে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে। এদের এই কুচক্রী সিদ্ধান্তের ফলে পরিবার গুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, সামাজিক সম্পর্ক গুলো কাকা দাদা পিসি মাসি হারিয়ে তারা দেশ ছেড়ে চলে এসেছে। আবার অনেকর প্রিয়জন দের মরতে দেখেছেন। আর তখন ঐ সব নামি স্বাধীনতা সংগ্রামী ইংরেজ দের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সাজানো জেলে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী সেজে। দেশটাকে ভাগ করে নিয়ে ক্ষমতা ভোগ করতে আরম্ভ করে দিয়ে ছিলেন। তারাই আসলে এই নতুন জাতি অর্থাৎ "বাঙাল জাতি" তৈরী করে দিয়েছে। আর এদের জন্য এখন অনেক রকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়। এমনকি তাদের এপার বাংলায় মেয়ে দের বিবাহ করার অধিকার টুকু নেই। যদিও হয়ে থাকে তবে সেটা অজান্তেই। জেনে সত্যিই বলে যদি বিবাহ হয়। তাহলে অনেক তথ্য গোপন রেখে না হলে কী করে ছেলেটি কে ঠকানো যায় তার ব্যবস্থা পাকা করে রাখে। কেন এতো কথা কারণ আমার বাবাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। নদিয়া জেলার ক্ষীতীশ চক্রবর্তীর মেয়ে যোগমায়া কে, যারা বাংলাদেশের পাবনা জেলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিল। এ তো গেল একটা দিক, আরেকটা দিকও আছে, যেমন ওপার বাংলার থেকে আসা মানুষ ব্রাহ্মণ হতে পারে না। আবার সে যদি আমার বাবার মতো সব হারিয়ে এপার বাংলায় আসে তবে, তিনি ব্রাহ্মণ হলেও ব্রাহ্মণ নন। শুনতে হয় ওপার থেকে এসে গলায় পৈতে ঝুলিয়ে ব্রাহ্মণ হয়েছে। আর মুখের ভাষা হলো শালা বাঙাল বামুন। আমি জানি না এসব কোনো কথা যারা শহরে বাস করেছেন। ওপার থেকে টাকা পয়সা সঙ্গে এনেছেন, তাদের শুনতে হয়েছে কিনা? আমার জানা নেই, কিন্তু ছিন্নমূল, সর্বস্ব হারানো, আত্মীয় স্বজন হারানো, মানুষ গুলো কে প্রতি নিয়ত এপার বাংলার শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষের কাছে অপমানিত হতে হয়েছে। জীবন যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থেকে এসেছে। শুধু ঐ তিন নেতার ক্ষমতা বা গোদির লোভে বা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হবার লোভে। লোভের স্বীকার হতে হয়েছে বাঙালি হিন্দু দের আর পাঞ্জাবের অধিবাসী শিখ দের। এখনো এরা অত্যাচারিত। আমাদের পলতাগড় গ্রামের ভিটেরে সামান্য জমি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে সেই বাবার আমল থেকে। যা আমি আগেই লিখেছি, বাবার আমলে আমি দেখেছি দড়ি দিয়ে জমি মেপে অশান্তি করতে। আমাদের বাড়িতে অনেক রকম ফলের গাছ ছিল। সেসব গাছে ফল হলে এসব হতো। ফল গুলো পেড়ে নিয়ে যেত নষ্ট করে দিত। আর মুখের ভাষা ছিল বাঙাল তাড়াতে হবে। আমিন এনে মাপা হতো তখন ঠিক হতো। একটা কথা বারবার বলতে শুনেছি ওজমি আমাদের নয় দান করা, বাবার কাছে শুনেছি দলিল করার খরচ কমানোর জন্য দানপত্র করা হয়েছিল। সকলেই হয়তো ভাবছেন তোমারা খুব ভালো কিছু বলতে না, শুধু শুধু পেছনে লাগতো। আমারা কি করতাম আগে বলে ছি। ওদেরি কারও কারও চাকর গিরি করতাম একমুঠো মুড়ি খাবার আশায়। যদি একটু ভুল হতো আর আমাদের বাড়িতে পোষা কোনো পশু জমিতে বা বাড়ির আশ পাশে যেতো তাহলে তো কথাই নেই শুরু হয়ে যেতো, ওদের বাঙাল তাড়ানো অভিযান। আমার বাবার আসল নামটাই অনেকেই জানেন না, তিনি হয়ে গিয়েছিলেন। বরিশাল মাস্টার, যদি এলাকায় কোন কেউ ভালো ভাবে বলত, তবে আমার পরিচয় বরিশাল মাস্টারের ছেলে। কারণ বাবা বরিশাল জেলা থেকে এসেছেন বলে।
আমার পঞ্চাশ বছর জীবনের অভিজ্ঞতা। কারণ আমার ব্যক্তিগত জীবনটাই একটা নাটক, হয়তো অনেকর ভালো লাগছে না। কিন্তু কী করি বলুন, আগে অন্য বিষয়ে কিছু লিখেছি। আমার ব্লগে কেউ পড়েছন বলে মনে হচ্ছে না। আমি সবটাই লিখছি আমার ব্যক্তিগত অভিমত অভিজ্ঞতা থেকে। আমার এই দুঃখের কথায় কেউ যদি সুযোগ খোঁজেন কিছু করার নেই। কারোর ভালো লাগছে না। তবে সবটাই সত্যি কথা, কারণ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আর জণ্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতি।যেমন আমি দেখেছি আমাদের পরিবার ছিল রাজনৈতিক দল দ্বারা আক্রান্ত যখন যে দল ক্ষমতায় তখনই সে তার ক্ষমতা দেখিয়েছে। আগেই লিখেছি আমার বাবার বেতন বন্ধ ছিলো 1971 সালে, আবার 1986 থেকে 1988 পর্যন্ত প্রায় দু বছর। অথচ 1986 থেকে 1988 প্রতিদিনই আমি নিজে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছি। পেছনে কারণ সেই রাজনীতির। যাহোক আরও অনেক কিছু লেখার আছে। তবে নীচের পুরনো দলিলের টুকরো অংশ দিলাম যেটি বাংলাদেশের বরিশালের নলচিরা গ্রামের গৌরনদী থানার অন্তর্গত ।আমার বাবার বা আমার বংশ পরিচয় জানার জন্য। এমন কেউ থাকেন যিনি ঐ নাম চেনন। তাহলে আমার ফেসবুকে লিখবেন এই আশায় রইলাম। এর আগেও আমি "আমার কথা" শিরোনামে লিখেছি তবুও যেন শেষ হয় নি। কারণ আগেই বলেছি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতি টি ঘটনা স্মরণীয়। তবে সমাজে ভালো মন্দ মানুষ থাকেন। প্রতিবেশী রা প্রতিবেশী না হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু অনেক ভালো মানুষ ছিলেন না হলে আমরা হয় তো বেঁচে থাকতাম না।যাই হোক বর্তমানে আমার বয়স পঞ্চাশ পার হয়েছে। তাই শিরোনামে আমার পঞ্চাশ বছর, এই পঞ্চাশ বছরের স্মৃতি থেকে আমার এবং আমার পরিবারের সুখ দুঃখের কথা সবার সাথে ভাগ করে নেব। আগেই লিখেছি দুঃখের কথায় মানুষ সুযোগ খোঁজেন। আবার অনেকে অপরের দুঃখে আনন্দ পান।
আবার এরকম একটা কথা আমি শুনেছি ভারাক্রান্ত মন কে হাল্কা করে নেওয়া যায়, তাই আজ আমি আমার জীবনের সকল সুখ দুঃখের কথা লিখে যাব। প্রথম আমি বলি আমার যখন একটু জ্ঞান হলো আমি বুঝতে শিখলাম, তখন থেকে অভাব আর অভাব বাড়িতে প্রতিদিন খাবার জুটত না। কেন ঠিক জানি না, তবে শুনেছি বাবার বেতন ঠিক মতো আসত না। বিভিন্ন মুদির দোকান খালি ধার অনেকে দোকান দার কিছু দিন দিত তার পর আর মাল দিত না। একটু বড়ো হয়ে বেতন অনিয়মিত কিন্তু কিছু দোকান দার ছিল অসাধু। তারা আগে জেনে নিত বেতন কত, তারা পনেরো কুড়ি দিন জিনিস পত্র দেওয়ার পর জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়ে বেতনের সব টাকা টা করে রাখত। এটা আমরা বুঝতে পারলাম যখন আমরা বড়ো হলাম, মুদি দোকান থেকে মাল গুলো আনতে লাগলাম। খাতা আমাদের কাছে থাকতো রোজ দাম লিখিয়ে আনতাম। হিসেবে রাখতে শুরু করলাম তখন থেকেই পরিবর্তন হল। তবে বেতন অনিয়মিত হলেই গণ্ডগোল হতো। এবার আমার জণ্ম ভিটের কথা বলি। জণ্ম ভিটে বলতে সিঙ্গুর থানার অন্তর্গত পল্তাগড় গ্রামের বড়ো রাস্তা থেকে ভিতরে দু দিক বাঁশ বন দিয়ে ঘেরা একটি জায়গা। এখানেই আমাদের মাটির দেওয়াল, পেটো খোলার ছাউনি দেওয়া টিনের দরজা দেওয়া এক কামরার ঘর।বাড়িতে নানা ফল আর ফুলের গাছ। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল না সব দিক ফাঁকা। একটু বৃষ্টি আর জোর হাওয়া দিলে বাঁশের ডগ লেগে পেটো সরে যেতো, তখন বৃষ্টির জল আর বাইরে পড়ত না। ইঁদুরের গর্তে ভর্তি দেওয়াল কোনো কোনো সময় ভেঙে পড়েছে। তবে মূল ঘরের নয় পাশের আরেক টি ছোট চালা মতো রান্না ঘর ছিল তার দেওয়াল বেশি ভাঙত। বড়ো ঘরের দেওয়াল একবার ভেঙে পড়ে ছিল। কেন জানি না আমাদের প্রতি মানুষের এত রাগ কেন ছিল! আমার বাবা দেশ স্বাধীন হবার দু তিন বছর আগে এপার বাংলায় এসেছিলেন। আর ভারত ভাগ হয়ে যখন দেশ স্বাধীন হলো তখন তো পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু দের কচু কাটা করছিল। বাবা ঠাকুমার মুখে শুনেছি সব থেকে বেশি দাঙ্গা পীড়িত ছিল নোয়াখালী যশোহর খুলনা বরিশাল বাবা 1948 এর এপ্রিল মাসে তত কালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ঠাকুমা কে নিয়ে আসেন। ঠাকুমার ভাষায় বাংলাদেশী টান ছিল। আমরা ছিলাম বাঙাল বাচ্চা, আরও কত কী। শিক্ষিত মাষ্টার মশায়রা পর্যন্ত বলতো। ঐ সব শুনতাম আর ভাবতাম তাহলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা বাঙালি নয়! ভীষণ হীনমন্যতায় ভুগেছি। এখন ভাবি আমার বাবা তাহলে কত সহ্য করেছেন, এপার বাংলার তথাকথিত শিক্ষিত ও এবং অশিক্ষিত মানুষ গুলোর অত্যাচার। অনেকেই ভাববেন এখন হয়তো এই অত্যাচার বন্ধ হয়ে গিয়েছে, না। আছে কারণ ঐ রকম প্রতিবেশী নাম ধারী কিছু মানুষ এবং তাদের বংশধর রা এখনও পর্যন্ত সুযোগ পেলে ভিটে দখল করতে আসে।
অসত্বিতের সংকট।
ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষের অস্তিত্বের সংকট। কীভাবে বলছি যে সব পরিবার এপার বাংলার গ্রামের দিকে বসবাস শুরু করেন। যেমন আমার বাবা তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগেই এপার বাংলায় এসেছিলেন। কিন্তু দেশ ভাগের পর হতেই শুরু হয়েছিল নানা রকম অত্যাচার তোর বাড়ি এখানে নয় তোকে থাকতে দেবনা। চাকরি করতে দেব না। আমরা বড়ো হয়েও দেখেছি সেই অত্যাচার। সব সময় আসত এবং বলত তোদের এখানে থাকতে দেবে না। কারণ এ জমি তোদের নয় আর গালাগাল খিস্তি ওটা ছিল উপরই পাওনা। 1971 - 1972 সালে এই অত্যাচার চরমে ওঠে। কারণ ছিল বাবা নাকি যুক্ত ফ্রন্টের পোষ্টার মের ছিলেন না ছিঁড়ে ছিলেন। কারণ দলের লোকজন এসে অত্যাচার করত। এক দল বলত মাষ্টার ফ্রন্টের পোষ্টার মেরেছে আরেক দল বলত ফ্রন্টের পোষ্টার ছিঁড়েছে। এই অযুহাতে বাবাকে 11মাস স্কুলে ঢুকতে দেয় নি, শেষে কয়েক জন ভাল মানুষের চেষ্টায় বাবাকে বদলি করা হয়েছিল অন্য স্কুলে। আমরা পড়তে গেছি কোনো সমস্যা হয়েছে একটু যেই বলেছি অমনি শুনতে হত এই বাঙল বাচ্চা চুপ কর। যেন আমরা অমানুষ আমাদের কথাবলার অধিকার নেই। ছোট থেকে বড় হয়ে প্রচুর অর্থ নৈতিক কষ্ট পেয়েছি। 1980 সালের পর একটু কষ্ট লাঘব হয়েছিল। ছোট থেকে বড় হয়েছি প্রচুর হীনমন্যতায় ভুগেছি। 1986 থেকে 1989 সালের মার্চ মাস পর্যন্ত কষ্টে কেটেছে। কারণ এই সময় বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তিনি 1988 সালের এপ্রিল মাসে মারা যান।
এবার আমার কথা। আমি 1989 সালের মার্চ মাসে বাবার চাকরিতে যোগ দিই সে নাটকের কথা আগেই লিখেছি। চাকরি পাওয়ার এক বছর পর আমি মাটির ঘর ফেলে ইঁট দিয়ে দু কামরা ঘর করলাম টালি দিয়ে ছাওয়া। তার পর 1994 সালে বিবাহ করলাম। আমার পক্ষ থেকে সব সত্য জানান হলো। কিন্তু অপর পক্ষ যা করল ঠিক তার উল্টো তাই মিথ্যা আর অবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠল আমার সংসার। অবিশ্বাস থাকলে যা হয়। এপর 1999 সালে বাড়ি সংস্কার করে নিতে চাইলাম। জায়গা মাপতে গিয়ে বাধা এল তথা কথিত প্রতিবেশী দের কাছ থেকে। আগেই বলেছি পাড়ার সি পি আই এম দলের রাজনৈতিক দাদা সতীশ দাস দলবল নিয়ে চড়াও হল আমার বাড়িতে। আমিও ঐদলকেই সর্মথন করি কিন্তু তাতে কী আমার বাড়িতে চারটি ভোট ওরা অনেক সুতরাং পার্টি ওদের দিকে। আমার পক্ষে নেই এখানে সি পি আই এম পার্টি যারা সেই সময় ক্ষমতায় ছিল। ঠিক আমার বাবার সঙ্গে যা ঘটে ছিল আমার সাথে অল্প বিস্তর ঘটলো আমার বাবাকে প্রশাসন সাহায্য করে ছিল। আমাকে প্রশাসন সাহায্য করল না। তার পর যা হবার হল ওরকম ফাঁকা বাড়িতে দিনের পর দিন রয়ে গেলাম। তবুও ওই দল ছাড়লাম না। কিন্তু ওই দলের সাঙ্গ পাঙ্গরা আমায় বিশ্বাস করতে পারল না। অথচ ভোট এলেই চাঁদা দিতে বলে। সব রকমের সাহায্য গত বছর পর্যন্ত করেছি। মিছিল মিটিংয়ে অংশ গ্রহণ করেছি। তাও এদের শিক্ষক সংগঠন যার আমি সদস্য তারা অপমান কর কথা বলে সংগঠন থেকে বের করে দেয়। আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি করব তবে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে না হলে আরও অপমানিত হতে হবে। তা হলে এখন আপনারা বিচার করে দেখুন আমার অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে কিনা। যদি কেউ আমার লেখা পড়েন অবশ্যই মতামত দেবেন। আপনাদের মতামতের আশায় রইলাম।
এবার আমার কথা। আমি 1989 সালের মার্চ মাসে বাবার চাকরিতে যোগ দিই সে নাটকের কথা আগেই লিখেছি। চাকরি পাওয়ার এক বছর পর আমি মাটির ঘর ফেলে ইঁট দিয়ে দু কামরা ঘর করলাম টালি দিয়ে ছাওয়া। তার পর 1994 সালে বিবাহ করলাম। আমার পক্ষ থেকে সব সত্য জানান হলো। কিন্তু অপর পক্ষ যা করল ঠিক তার উল্টো তাই মিথ্যা আর অবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠল আমার সংসার। অবিশ্বাস থাকলে যা হয়। এপর 1999 সালে বাড়ি সংস্কার করে নিতে চাইলাম। জায়গা মাপতে গিয়ে বাধা এল তথা কথিত প্রতিবেশী দের কাছ থেকে। আগেই বলেছি পাড়ার সি পি আই এম দলের রাজনৈতিক দাদা সতীশ দাস দলবল নিয়ে চড়াও হল আমার বাড়িতে। আমিও ঐদলকেই সর্মথন করি কিন্তু তাতে কী আমার বাড়িতে চারটি ভোট ওরা অনেক সুতরাং পার্টি ওদের দিকে। আমার পক্ষে নেই এখানে সি পি আই এম পার্টি যারা সেই সময় ক্ষমতায় ছিল। ঠিক আমার বাবার সঙ্গে যা ঘটে ছিল আমার সাথে অল্প বিস্তর ঘটলো আমার বাবাকে প্রশাসন সাহায্য করে ছিল। আমাকে প্রশাসন সাহায্য করল না। তার পর যা হবার হল ওরকম ফাঁকা বাড়িতে দিনের পর দিন রয়ে গেলাম। তবুও ওই দল ছাড়লাম না। কিন্তু ওই দলের সাঙ্গ পাঙ্গরা আমায় বিশ্বাস করতে পারল না। অথচ ভোট এলেই চাঁদা দিতে বলে। সব রকমের সাহায্য গত বছর পর্যন্ত করেছি। মিছিল মিটিংয়ে অংশ গ্রহণ করেছি। তাও এদের শিক্ষক সংগঠন যার আমি সদস্য তারা অপমান কর কথা বলে সংগঠন থেকে বের করে দেয়। আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি করব তবে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে না হলে আরও অপমানিত হতে হবে। তা হলে এখন আপনারা বিচার করে দেখুন আমার অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে কিনা। যদি কেউ আমার লেখা পড়েন অবশ্যই মতামত দেবেন। আপনাদের মতামতের আশায় রইলাম।
গ্রামের দাদা আর আমি
ভূমিকা । এখন যে গল্প লিখতে যাচ্ছি সেটি এক রাজনৈতিক দাদার গল্প কিন্তু চরম বাস্তব। আমার জীবনে প্রথম আমি বাইরের লোকের কাছে মার খেয়ে ছিলাম। সেটা ছিল 1978 সদ্য ক্ষমতায় এসেছে cpim। আর ঐ বছর বাংলায় বন্যা ব্যাপকভাবে CPIM দলের তরফে বা সরকার থেকেই হোক আটা বিলি করা হচ্ছে। আমিও গিয়েছি লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছি। যত বার সামনে যাই আমাকে আর দেয় না। আমি ছোট ছিলাম অত বুঝি নি যে আমাকে দেওয়া হবে না। যখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে সবাই চলে গেছে আমি দাঁড়িয়ে আছি। তখন ললিত পাল নামে CPM এক নেতা অমুকের বাচ্ছা বলে গালে সপাটে চড় মারেন। আমি পড়ে গেলাম। মার খেয়ে চলে আসছি এমন সময় শুনছি ললিত পাল বলছে শালা অমুকের বাচ্ছার জান শক্ত মরবে না। সতীশ দার কী দয়া হল ডাকল ওই শোন আমি ভয়ে কাছে যাচ্ছিলাম না যদি আবার মারে। সতীশ দাস বলল ভয় নেই মারব না। আমি কাছে গেলাম সে যারা আটা দিচ্ছিল তাদের বলল বস্তাগুলো ঝাড় বস্তা ঝাড়া হল। আটা শানে পড়ল ঝাঁড় দিয়ে জড়ো করে আমার ব্যাগে ভরে দেওয়া হল। আমি তাই নিয়ে বাড়ি এলাম।
সতীশ দাস সর্ম্পকে কিছু কথা। এই সতীশ বাবার কাছে ছোট বেলায় পড়তো। পড়তে চাইতো না। বাবা জোর করে ধরে রেখে পড়াতো । সতীশ দাসের অনেক গুন ছিল, একদিন সন্ধ্যায় আমি পড়ে আসছি ওখানে একটা ক্লাব ছিল তারা ডাকল নাটকের বই পড়ে বলার জন্য। সেই শুরু হলো আমার CPM এ যাওয়া তারপর বুথে বসা। মিটিং মিছিলে যাওয়া তখন আমার বয়স কম ক্লাস সেভেনে বা এইটে পড়ি। মতীশ দাদা 1980 সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিযুক্ত হল। দেখলাম যারা CPM কে দেখে ঘৃণা করত তারাও CPM এ এল কারণ সতীশ দাস তাদের বাড়ি আড্ডা দিত। ওই বাড়িতে দুটি মেয়ে ছিল আমি যতই মিটিং মিছিল বুথে বসা দেওয়াল লেখা করিনা কেন আমি সদস্য হলাম না। ওরা সদস্য হল ভোটে দাঁড়াল হেরে গেল চরিত্র খারাপের জন্য। অনেক পরে ওদের এক ভাই CPM থেকে দাঁড়িয়ে জিতল। এখানে আমি পঞ্চায়েত ভোটের কথা বলছি। ভাইটি সতীশ দাসের সাথে এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে জিতল তার কী দেমাকে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে লাগল। আমি কোনো একটা কাজে পঞ্চায়েতে গিয়েছি আমার থেকে কাগজটা নিয়ে বলল এখানে আমার পাওয়ার বেশি তোমার পাওয়ার কাজ করবে না। আমার কাজ টা আর হলই না। এসব মানে ভাইটার সঙ্গে যে ঘটনা সেটা ঘটে ছিল আমি চাকরি পাওয়ার পর। এখন ঐ ভাইটা বাবার চাকরি পেয়েছে আমার মত। এবং CPM ছেড়ে দিয়েছে। এখন মানে আমি 2011 সালের পরের কথা বলছি। আমি কিন্তু CPM ছাড়েনি। এখনও মিটিং মিছিলে যাই সংগঠনের কাজ করি। এখন মানে 2017 সাল পর্যন্ত।
এবার আমার কথা। আগেই লিখেছি আমি চাকরি করি এই চাকরি পাওয়ার একটা ইতিহাস আছে। 1986 সালে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার পায়ে পচা ঘা হয়ে ছিল সঙ্গে সুগার প্রায় এক বছর রোগ ভোগের পর বাবা চাকরিতে যোগ দেন। এই এক বছরের কোন বেতন পেলেন না। কাজ করেন নি বেতন দেওয়া হয়নি। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। 1987 সালের ফেব্রুয়ারি থেকে 1988 সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি কাজ করা সত্বেও কোন বেতন পেলেন না। মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হল। এর মধ্যে তিনি আবার অসুস্থ হলেন চিকিৎসা করার পয়সা ছিল না। তিনি মারা গেলেন 1988 সালের 20 শে এপ্রিল। আমি বাড়ির বড়ো ছেলে তাই মা আমাকে চাকরিটি দেবন ঠিক করলেন। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। চাকরিটি পেতে হলে বাবার ডেথ সার্টিফিকেট বা বার্নিংঘাট সার্টিফিকেট লাগে বাবার বার্নিং এর সময় সতীশ দা ছিল কাগজ তার কাছে যতবার আনতে যাই ঘোরায়। শেষে জুন 1988 দাদার বাড়িতে বসে থেকে একটা আধ ছেঁড়া কাগজ দিল সেটি সার্টিফিকেট নয়। ওই কাগজ দেখিয়ে সার্টিফিকেট আনতে হবে। সে অনেক বার নাকি গেছে তাকে দেয়নি। এদিকে আমাদের সংসার চলে না মা কারখানায় কাজে যায়। আমি কাগজটা নিয়ে গেলাম তারা আমাকে একটা ডেট দিল এবং কত টাকা লাগবে বলে দিল। আমি সেই দিন যাব দেখি পাড়ার দাদাও আমার সঙ্গে গেলেন। সেদিন কাজ হল। এবার আবেদন করার পালা জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আবেদন পত্র নিয়ে আমি আর আমার আরেক ভাই অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে জমা দিতে গেলাম তিনি নানা ফিরিস্তি শুনিয়ে ফিরিয়ে দিলেন। এবার আগষ্ট মাসে আবার গেলাম তিনি যা বলেছিলেন সেই রকম সব করে নিয়ে। এবার আমার থেকে জমা নিলেন কিন্তু সব আসল কাগজ নিয়ে রাখলেন। রিসিভ করেও দিলেন না বাড়িতে বলার পর ভাই রেগে গিয়ে অফিসে গেল ও রিসিভ করিয়ে আনল। আসল কাগজ কেবল বাবার appointment ও আর কয়েকটা আসল কাগজ ফেরত নিয়ে এল। বলল আমি নাকি ফেলে এসেছি। তার ঠিক এক মাস পর গেলাম আমাকে একটা মেমো নং ও তারিখ দেওয়া হল। এবং হুগলি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ষদে যোগাযোগ করতে বলা হল। আমি গেলাম এ টেবিল ও টেবিলে ঘোরার পর এক জনের দয়া হল। তিনি একটি ছোট ঘরে নিয়ে গেলেন এবং সব খুঁজে বলেন কাগজ হারিয়ে গেছে। এই ঘটনার মাস দুয়েক বাদে আবার গেলাম ওই মেমো নং নিয়ে আমাকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়া হল। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় CPM এর ক্লাবে বসে আছি হঠাৎ একজন আমাকে বলল তোর চাকরিটা রমেশকে দেওয়া হবে। আমি বললাম সে আবার হয় নাকি আমার মায়ের দাবি পত্র চাই। বলল জানি না তবে কাগজ পত্র তৈরি হচ্ছে তাতে তোর মায়ের লেখা কাগজ বাবার পোড়ানোর কাগজ সব আছে। আমি বাড়িতে এসে মা কাজ থেকে ফিরতেই সব বললাম। মাকে এও বললাম মনে হয় হারিয়ে যাওয়ার নাম করে কাগজ এখানে নিয়ে এসেছে। মা শুনলেন কিছু বললেন না। পরের দিন সন্ধ্যায় মা কাজ থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন। আমাকে তপন স্যারের লেখা একটা চিঠি দিলেন সেটি নিয়ে ভোর বেলায় হাওড়া সালকিয়ায় এক জনের সাথে সাক্ষাৎ করতে বললেন। তিনি হাওড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ষদের চেয়ারম্যান। আরো বললেন সন্ধ্যার পর ক্লাবে গিয়ে আমি যেন বলি পনেরো দিনের মধ্যে চাকরিটা না হলে কোর্টে কেস করা হবে। আমি সন্ধ্যায় ক্লাবে গিয়ে তাই বললাম। অনেক অনেক শুনে হাসল কারণ আমাদের খাবার পয়সা নেই আমরা আবার কেস করব। আমি বললাম আমার স্যার বলেছেন তিনি আমার জন্য এটা করবেন। তপনবাবুর কাছে আমি অঙ্ক করতে যেতাম তিনি আমাকে বিনা পয়সায় পড়াতেন। তিনি ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক। পরের দিন ভোরে উঠে আমি হাওড়া সালকিয়ায় গেলাম ওই ভদ্রলোকের সাথে দেখা করতে তিনি তপন স্যারের চিঠি নিলেন এবং আমায় আরেকটা চিঠি লিখে দিলেন আর বললেন ঐদিনই যেন হুগলি জেলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করি। হাওড়া জেলার চেয়ারম্যানের নাম কী ছিলো ভুলে গেছি কী সাম মুখার্জী। ওই দিন সকাল দশটার পর আমি হুগলি জেলার চেয়ারম্যান অমিয় মৈত্র সঙ্গে দেখা করি। তিনি a. I. কল্যাণ বাবুকে ডেকে পাঠান আমি তার তাঁর ঘরে যাই অনেক খোঁজার পরে তাঁর ড্রয়ার থেকে কাগজ বেরিয়ে আসে। আবার নীচ থেকে অমিয় মৈত্র ডাকেন আমাকে জিজ্ঞেস ঐ চেয়ারম্যান কে হন। আরও নানা রকম প্রশ্ন যার অনেক মনে নেই। আর কল্যাণ বাবুকে বলেন কাগজ গুলো রাজ্য দপ্তরে ঐ দিনই পাঠিয়ে দিতে। পরে শুনেছি উনি কাগজ গুলো ঐ দিনই জমা করে এসেছিলেন। এটা ছিলো ডিসেম্বর মাস। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজ্য দপ্তর থেকে খবর আসে আঠাশে ফেব্রুয়ারি আমার appointment latter লেখা হবে। আমি গেলাম appointment latter আমার হাতে দেওয়া হল না। বলা হল ডাক যোগে পাব। সে এক নাটক মার্চ মাসের এক তারিখেই আমার appointment latter নাকি S. I. S. এসেছে বাড়িতে দফাদার সে বই আনতে গিয়ে ছিল তাকে খবর দিতে বলেছে। আমাকে XEROX করে আনতে হবে। Appointment latter আবার xerox বললাম ওতো post মারফৎ আসবে। এটাও প্রচার হল পনেরো মার্চের মধ্যে joint করতে হবে। কী করি ভেবে পাচ্ছি না শেষে 3রা মার্চ s. I. S. থেকে Xerox করে নিলাম। এবার attested করতে হবে। তবে joint করা যাবে। s. I. S. যখনই যাই s. I. S থাকে না। তখন 12 তারিখ হয়ে গেছে। তপন স্যার বলেছেন যিনি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি attested করে দেন তবে ওটাই আসল কপি হবে। 12 তারিখ সকালে এক জন শিক্ষক ও পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সদস্য দিলীপ চক্রবর্তীর কাছে মা আর আমরা দুভাই গেলাম তিনি বললেন নিশ্চিন্তে যান আমি আজই করে এনে দেবে। তিনি কথা রাখলেন এবং আমি রাম নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলাম। এটা ছিল 1989 সালের 14 ই মার্চ। আমার জীবনে আরও অনেক স্মরণীয় ঘটনা আছে সে সব অন্য সময় লিখব। আজ এই পর্যন্ত থাক।যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি আমার পুরোনো শিকড়ের সন্ধান পান তাহলে 7980951395 এই নম্বরে ফোন করতে পারেন।
সতীশ দাস সর্ম্পকে কিছু কথা। এই সতীশ বাবার কাছে ছোট বেলায় পড়তো। পড়তে চাইতো না। বাবা জোর করে ধরে রেখে পড়াতো । সতীশ দাসের অনেক গুন ছিল, একদিন সন্ধ্যায় আমি পড়ে আসছি ওখানে একটা ক্লাব ছিল তারা ডাকল নাটকের বই পড়ে বলার জন্য। সেই শুরু হলো আমার CPM এ যাওয়া তারপর বুথে বসা। মিটিং মিছিলে যাওয়া তখন আমার বয়স কম ক্লাস সেভেনে বা এইটে পড়ি। মতীশ দাদা 1980 সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিযুক্ত হল। দেখলাম যারা CPM কে দেখে ঘৃণা করত তারাও CPM এ এল কারণ সতীশ দাস তাদের বাড়ি আড্ডা দিত। ওই বাড়িতে দুটি মেয়ে ছিল আমি যতই মিটিং মিছিল বুথে বসা দেওয়াল লেখা করিনা কেন আমি সদস্য হলাম না। ওরা সদস্য হল ভোটে দাঁড়াল হেরে গেল চরিত্র খারাপের জন্য। অনেক পরে ওদের এক ভাই CPM থেকে দাঁড়িয়ে জিতল। এখানে আমি পঞ্চায়েত ভোটের কথা বলছি। ভাইটি সতীশ দাসের সাথে এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে জিতল তার কী দেমাকে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে লাগল। আমি কোনো একটা কাজে পঞ্চায়েতে গিয়েছি আমার থেকে কাগজটা নিয়ে বলল এখানে আমার পাওয়ার বেশি তোমার পাওয়ার কাজ করবে না। আমার কাজ টা আর হলই না। এসব মানে ভাইটার সঙ্গে যে ঘটনা সেটা ঘটে ছিল আমি চাকরি পাওয়ার পর। এখন ঐ ভাইটা বাবার চাকরি পেয়েছে আমার মত। এবং CPM ছেড়ে দিয়েছে। এখন মানে আমি 2011 সালের পরের কথা বলছি। আমি কিন্তু CPM ছাড়েনি। এখনও মিটিং মিছিলে যাই সংগঠনের কাজ করি। এখন মানে 2017 সাল পর্যন্ত।
এবার আমার কথা। আগেই লিখেছি আমি চাকরি করি এই চাকরি পাওয়ার একটা ইতিহাস আছে। 1986 সালে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার পায়ে পচা ঘা হয়ে ছিল সঙ্গে সুগার প্রায় এক বছর রোগ ভোগের পর বাবা চাকরিতে যোগ দেন। এই এক বছরের কোন বেতন পেলেন না। কাজ করেন নি বেতন দেওয়া হয়নি। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। 1987 সালের ফেব্রুয়ারি থেকে 1988 সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি কাজ করা সত্বেও কোন বেতন পেলেন না। মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হল। এর মধ্যে তিনি আবার অসুস্থ হলেন চিকিৎসা করার পয়সা ছিল না। তিনি মারা গেলেন 1988 সালের 20 শে এপ্রিল। আমি বাড়ির বড়ো ছেলে তাই মা আমাকে চাকরিটি দেবন ঠিক করলেন। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। চাকরিটি পেতে হলে বাবার ডেথ সার্টিফিকেট বা বার্নিংঘাট সার্টিফিকেট লাগে বাবার বার্নিং এর সময় সতীশ দা ছিল কাগজ তার কাছে যতবার আনতে যাই ঘোরায়। শেষে জুন 1988 দাদার বাড়িতে বসে থেকে একটা আধ ছেঁড়া কাগজ দিল সেটি সার্টিফিকেট নয়। ওই কাগজ দেখিয়ে সার্টিফিকেট আনতে হবে। সে অনেক বার নাকি গেছে তাকে দেয়নি। এদিকে আমাদের সংসার চলে না মা কারখানায় কাজে যায়। আমি কাগজটা নিয়ে গেলাম তারা আমাকে একটা ডেট দিল এবং কত টাকা লাগবে বলে দিল। আমি সেই দিন যাব দেখি পাড়ার দাদাও আমার সঙ্গে গেলেন। সেদিন কাজ হল। এবার আবেদন করার পালা জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আবেদন পত্র নিয়ে আমি আর আমার আরেক ভাই অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে জমা দিতে গেলাম তিনি নানা ফিরিস্তি শুনিয়ে ফিরিয়ে দিলেন। এবার আগষ্ট মাসে আবার গেলাম তিনি যা বলেছিলেন সেই রকম সব করে নিয়ে। এবার আমার থেকে জমা নিলেন কিন্তু সব আসল কাগজ নিয়ে রাখলেন। রিসিভ করেও দিলেন না বাড়িতে বলার পর ভাই রেগে গিয়ে অফিসে গেল ও রিসিভ করিয়ে আনল। আসল কাগজ কেবল বাবার appointment ও আর কয়েকটা আসল কাগজ ফেরত নিয়ে এল। বলল আমি নাকি ফেলে এসেছি। তার ঠিক এক মাস পর গেলাম আমাকে একটা মেমো নং ও তারিখ দেওয়া হল। এবং হুগলি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ষদে যোগাযোগ করতে বলা হল। আমি গেলাম এ টেবিল ও টেবিলে ঘোরার পর এক জনের দয়া হল। তিনি একটি ছোট ঘরে নিয়ে গেলেন এবং সব খুঁজে বলেন কাগজ হারিয়ে গেছে। এই ঘটনার মাস দুয়েক বাদে আবার গেলাম ওই মেমো নং নিয়ে আমাকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়া হল। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় CPM এর ক্লাবে বসে আছি হঠাৎ একজন আমাকে বলল তোর চাকরিটা রমেশকে দেওয়া হবে। আমি বললাম সে আবার হয় নাকি আমার মায়ের দাবি পত্র চাই। বলল জানি না তবে কাগজ পত্র তৈরি হচ্ছে তাতে তোর মায়ের লেখা কাগজ বাবার পোড়ানোর কাগজ সব আছে। আমি বাড়িতে এসে মা কাজ থেকে ফিরতেই সব বললাম। মাকে এও বললাম মনে হয় হারিয়ে যাওয়ার নাম করে কাগজ এখানে নিয়ে এসেছে। মা শুনলেন কিছু বললেন না। পরের দিন সন্ধ্যায় মা কাজ থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন। আমাকে তপন স্যারের লেখা একটা চিঠি দিলেন সেটি নিয়ে ভোর বেলায় হাওড়া সালকিয়ায় এক জনের সাথে সাক্ষাৎ করতে বললেন। তিনি হাওড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ষদের চেয়ারম্যান। আরো বললেন সন্ধ্যার পর ক্লাবে গিয়ে আমি যেন বলি পনেরো দিনের মধ্যে চাকরিটা না হলে কোর্টে কেস করা হবে। আমি সন্ধ্যায় ক্লাবে গিয়ে তাই বললাম। অনেক অনেক শুনে হাসল কারণ আমাদের খাবার পয়সা নেই আমরা আবার কেস করব। আমি বললাম আমার স্যার বলেছেন তিনি আমার জন্য এটা করবেন। তপনবাবুর কাছে আমি অঙ্ক করতে যেতাম তিনি আমাকে বিনা পয়সায় পড়াতেন। তিনি ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক। পরের দিন ভোরে উঠে আমি হাওড়া সালকিয়ায় গেলাম ওই ভদ্রলোকের সাথে দেখা করতে তিনি তপন স্যারের চিঠি নিলেন এবং আমায় আরেকটা চিঠি লিখে দিলেন আর বললেন ঐদিনই যেন হুগলি জেলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করি। হাওড়া জেলার চেয়ারম্যানের নাম কী ছিলো ভুলে গেছি কী সাম মুখার্জী। ওই দিন সকাল দশটার পর আমি হুগলি জেলার চেয়ারম্যান অমিয় মৈত্র সঙ্গে দেখা করি। তিনি a. I. কল্যাণ বাবুকে ডেকে পাঠান আমি তার তাঁর ঘরে যাই অনেক খোঁজার পরে তাঁর ড্রয়ার থেকে কাগজ বেরিয়ে আসে। আবার নীচ থেকে অমিয় মৈত্র ডাকেন আমাকে জিজ্ঞেস ঐ চেয়ারম্যান কে হন। আরও নানা রকম প্রশ্ন যার অনেক মনে নেই। আর কল্যাণ বাবুকে বলেন কাগজ গুলো রাজ্য দপ্তরে ঐ দিনই পাঠিয়ে দিতে। পরে শুনেছি উনি কাগজ গুলো ঐ দিনই জমা করে এসেছিলেন। এটা ছিলো ডিসেম্বর মাস। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজ্য দপ্তর থেকে খবর আসে আঠাশে ফেব্রুয়ারি আমার appointment latter লেখা হবে। আমি গেলাম appointment latter আমার হাতে দেওয়া হল না। বলা হল ডাক যোগে পাব। সে এক নাটক মার্চ মাসের এক তারিখেই আমার appointment latter নাকি S. I. S. এসেছে বাড়িতে দফাদার সে বই আনতে গিয়ে ছিল তাকে খবর দিতে বলেছে। আমাকে XEROX করে আনতে হবে। Appointment latter আবার xerox বললাম ওতো post মারফৎ আসবে। এটাও প্রচার হল পনেরো মার্চের মধ্যে joint করতে হবে। কী করি ভেবে পাচ্ছি না শেষে 3রা মার্চ s. I. S. থেকে Xerox করে নিলাম। এবার attested করতে হবে। তবে joint করা যাবে। s. I. S. যখনই যাই s. I. S থাকে না। তখন 12 তারিখ হয়ে গেছে। তপন স্যার বলেছেন যিনি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি attested করে দেন তবে ওটাই আসল কপি হবে। 12 তারিখ সকালে এক জন শিক্ষক ও পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সদস্য দিলীপ চক্রবর্তীর কাছে মা আর আমরা দুভাই গেলাম তিনি বললেন নিশ্চিন্তে যান আমি আজই করে এনে দেবে। তিনি কথা রাখলেন এবং আমি রাম নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলাম। এটা ছিল 1989 সালের 14 ই মার্চ। আমার জীবনে আরও অনেক স্মরণীয় ঘটনা আছে সে সব অন্য সময় লিখব। আজ এই পর্যন্ত থাক।যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি আমার পুরোনো শিকড়ের সন্ধান পান তাহলে 7980951395 এই নম্বরে ফোন করতে পারেন।