যুগে যুগে ধর্মের কারণে মানবতা ধ্বংস করে আসছে এক দল মানুষ। মন্দির বলুন আর মসজিদ গির্জা দরগা এসব এক একটা ধর্মের উপাসনা লয়। সর্বত্র দেবতা বিরাজ মান। সব দেবতার ভক্ত দের কথা সভ্য ভদ্র, সৎ মানুষের পাশে থাকেন, এই দেবতারা। কারোর ক্ষতি সাধন করা এদের কাজ নয়, কিন্তু ভেবে দেখুন একদল মানুষ প্রতিনিয়ত দেবতার নাম করে মানুষ কে ঠকিয়ে যাচ্ছে, আর কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে যাচ্ছে। ভারতের এমন অনেক মন্দির, মসজিদ, দরগা, আছে যেখানে প্রতি দিন মানুষ যান, আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ লাভের আশায় এবং নিজের খুশি বা ঐ প্রতিষ্ঠান পরিচালকের আবেদন মত অর্থ দান করে আসেন। অবশ্য অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যারা সমাজ সেবা দিয়ে থাকে, কেউ কেউ চিকিৎসা থেকে করে শিক্ষা, বা হত দরিদ্র অনাথ শিশু দের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। এসব থাক এসব ধর্ম নিয়ে কারবার বা ব্যবসায়ী দের ব্যাপার।
এত গেল একটা দিক, আমার আজকের বিষয় কিন্তু
এটা নয়। আমার প্রশ্ন ধর্ম এলো কীভাবে? ইতিহাসে যতদূর পড়েছি। মানুষ যখন একটু একটু করে সভত্যা গড়ে তুলেছে, তাদের সামনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য বিজ্ঞানের ধারনা ছিল না। সেই কারণেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় গুলো কে ভয় পেয়েছে, এবং এক একটি দেবতার আবির্ভাব ঘটেছে, বা দেবতা বলে পূজো করে এসেছে। বন্যা, ঝড় বৃষ্টি, অকাল মৃত্যু, মহামারী, পক্স, বা বসন্ত, সাপের কামড়, আরও নানা ঘটনা কে তারা দেবতার দ্বারা পরিচালিত বলে, তাদের পূজো করে গেছে। ভেবে দেখুন পবন, ঝড়ের দেবতা, বন্যা বা জলের দেবতা বরুণ, বাজ নিক্ষেপের দেবতা ইন্দ্র, পক্স বা বসন্তের দেবী শীতলা, সাপের দেবী মনসা, বাঘের দেবী বনবিবি, ভুত প্রেত দের ঠান্ডা করতে শিব, অসুরদের দমন করতে মা দুর্গা, কালী, লেখা পড়া সরস্বতী, ধন বা টাকার দেবী লক্ষী, ধর্ম যমরাজ এবং সর্বোপরি ব্রহ্মা যিনি এই পৃথিবীর সৃষ্টি কর্তা। এরকম হাজারো দেবতা, সেই আদিম যুগ থেকে পুজো হয়ে আসছে, আর এরমধ্যে অগ্নির কথা বলা হয়নি। আমি যতদূর জানি মানুষের সভ্যতা এগিয়ে গেছে, ধীরে ধীরে সে পশুপালন শিখেছে, পশুর খাবার যোগার করতে গিয়ে যাযাবর হয়েছে, আর কৃষি কাজ শিখে সে যাযাবর জীবনের ইতি টেনেছে। মানুষ যত সভ্য হয়েছে, গোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে, এক গোষ্ঠীর সাথে আরেক গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব বেড়েছে, লড়াই যুদ্ধ এসেছে, বেশি সভ্য মানুষ তখনও যারা লেখাপড়া বা ভালো সভ্য হয়ে উঠতে পারে নি। কাঁচা মাংস, খেত, ফলমূল খেত গাছে গাছে ঘুরে বেড়াত, সেরকম মানুষ কে রাক্ষস, বা বানর নামে ডাকা হত, পরে এরা যখন ঐ সভ্য জাতির সংস্পর্শে এসেছে, চাষ শিখেছে, পশুপালনকে জীবিকা করেছে। এরা অনার্য, আর ঐ সুসভ্য মানুষ আর্য, এসেছে আর্য সভ্যতা, অনার্য দের সাথে যুদ্ধ সেতো আমরা রামায়ণ, মহাভারতে পাই। আর্য দের দ্বারা ভারতে এসেছে ব্রাহ্মণ্যবাদ, আর্যরা ধর্ম দিয়ে মানুষ কে এক করতে চেষ্টা করে গেছে,পরবর্তীতে আর্য এবং অনার্য দের দেবতারা যে এক এবং অভিন্ন তা আমরা অনেক ধর্ম গ্রন্থে পাই। আমি যতদূর জানি শিব, কালী, মনসা, ইত্যাদি অনার্য দের দেবতা। আর্যরা তাদের সভত্যা টিঁকিয়ে রাখতে, কাজের ভিত্তিতে সমাজ কে চার টি ভাগে করে দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র, ব্রাহ্মণের কাজ ধর্ম পালন পূজা যাজ্ঞ যজ্ঞ, এবং ধর্মীয় শিক্ষাদান। আর ক্ষত্রিয় দেশ রক্ষা এবং দেশ শাসন করার জন্য, বৈশ্য চাষবাস ব্যবসা বানিজ্য, এবং এই তিন ভাগের সেবা করার জন্য শুদ্র, সেবা মানে পা টেপা নয়। সভ্য যখন চুল দাড়ি নখ কাটা, ঘর বাড়ি তৈরি করে দেওয়া, পথ ঘাট পরিষ্কার করা ইত্যাদি। পরবর্তী কালে এই কাজের জন্য সমাজ ভাগটাই ভীষণ ভাবে জাতিভেদে পরিবর্তন হয়েছে। ব্রাহ্মণরা নিজেকে সবার উপরে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এই বিপত্তি, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠা আর্য সভ্যতার ধ্বংসের কারণ, ব্রাহ্মণ দের এই কর্তৃত্ব এবং অপর কে ছোট করে নিজে বড়ো হওয়ার মানসিকতা আর নীচের ঐ শুদ্র কে পাত্তা না দেওয়া, কিছু ক্ষেত্রে বৈশ্য দের সাথেও সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা, এবং দমন পীড়ন, সনাতন ধর্মের প্রতি এদের অনীহা দেখা দিয়েছে, জণ্ম নিয়েছে, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, শিখ ধর্ম, তারও পরে খ্রীষ্টান ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম। ইতিহাসে যতদূর পড়েছি,যেখানে খ্রীষ্টান ধর্ম বা ইসলাম ধর্ম প্রচলিত হয়েছে, সেখানেও আগেই মানুষ নানা দেবদেবীর পূজো করত। যেমন রোমান বা গ্রীক পুরাণের অনেক দেব দেবীর পুজোর উল্লেখ আছে। আমি আগেই বলেছি সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ সেই আদিম কাল থেকে নানা দেবদেবীর পূজা করে এসেছে। পুরোহিত তথা ব্রাহ্মণ্যবাদ মানুষ কে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, যে কারণে এই সব এক ঈশ্বর, ব্যক্তি কে ঈশ্বরের দূত এবং তার কথা গুলো বানী বা ঈশ্বরের বাণী এভাবেই পরবর্তী ধর্ম গুলো এসেছে। বিশ্ব অনেক ধর্মযুদ্ধ দেখেছে। অতিতে বিভিন্ন সময়ে এই ধর্ম যুদ্ধ হয়েছে, এমনকি একই ধর্মের মধ্যেও গোষ্ঠী বা দলের মধ্যে এই ধর্ম যুদ্ধ হয়েছে।
এবার আমরা আমার জণ্ম ভূমি বাংলার কথায় আসি, কারণ এখানে আজও ধর্মের নামে মানবতা ভুলুণ্ঠিত। ইসলাম ধর্মের মানুষ আজও সনাতন হিন্দুদের উপর অত্যাচার করে যাচ্ছে, এই যে অত্যাচার আজ থেকে নয়। যুগ যুগ ধরে এই একটা ধর্মের মানুষ যারা ধর্মের নামে মানুষ খুন করে, অন্য ধর্মের মানুষ কে মানুষ বলে মনে করে না। কোন ধর্মের সাধক ঈশ্বর বলুন, ভগবান বলুন আল্লাহ বলুন তাকে চোখে দেখেনি। তিনি দূত পাঠিয়ে বানী বলতে বলেছেন। আমার একটা প্রশ্ন সৃষ্টি কর্তা তিনি কী সব ধর্মের এক একজন আলাদা, তিনি জাত বা ধর্ম দিয়ে পাঠান, না গায়ে বা পিঠে ছাপ মেরে পাঠান এ ইসলাম এ হিন্দু এ খ্রীষ্টান, এ বৌদ্ধ আমি জানি না। কারণ আমি ও ঈশ্বর কে চোখে দেখিনি জানি না স্বর্গ বলে কিছু আছে কি না! যা লিখছিলাম, অনেকেই বলেন বা ইতিহাসের পাতায় পড়েছি, এই বাংলায় ইসলাম এসেছে, খলজির হাত ধরে। অর্থাৎ সেন বংশের পতনের মধ্য দিয়ে। যদি আমরা ইতিহাস দেখি তবে দেখা যাবে এই সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন কৌলিন্য বা কুলীন প্রথা চালু করে ছিলেন। অর্থাৎ জাতি ভেদ কে কঠোর ভাবে পালন করতে হবে, না হলে শাস্তি পেতে হবে। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবাদ কঠোর ভাবে বলবৎ করে তুলেছিলেন। আর এই কঠোরতা সেন বংশের পতনের কারণ, উগ্র হিন্দুত্ব বাদ বা সেন বংশের রাজা দের পাশ থেকে নিম্ন বর্ণের মানুষের সরে যাওয়ার কারণে সেন বংশের পতন ডেকে আনে, না হলে কথিত আছে মাত্র পঁচিশ জন ঘোড় শোওয়ার সৈন্য বাংলার সেন বংশের পতন ঘটিয়ে ছিল। ইতিহাসের পাতায় যেটা আছে রাজা লক্ষ্মণ সেন বুড়ো হয়ে ছিলেন, কিন্তু তার সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল না, তারা বাধা দেয় নি। নিশ্চয়ই দিয়েছে, কিন্তু ঐ পঁচিশ জনের সাথে যুদ্ধ করে পারেনি, না সংখ্যায় ওর থেকে কম ছিল। কেউ কেউ বলেন রাতের অন্ধকারে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন, সেই কারণেই পরাজিত হন। আমার তো মনে হয়, তা নয় উগ্র হিন্দুত্ব বাদের জন্য নিম্ন জন জাতি রাজা সেনাবাহিনীতে নিতেন না, নিলেও তারা সংখ্যায় কম ছিল, আর ঐ সব মানুষের মনে ক্ষোভ ছিল, সেই সব কারনেই, সেন বংশের পতন।
বাংলায় সেই শুরু হয় ইসলামের অত্যাচার, যা আজও চলছে, কারণ উগ্র হিন্দুত্ব বাদ নিম্ন বর্ণ বা শুদ্র কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈশ্যরাও পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বাংলায় ইসলাম বিস্তারে সাহায্য করেছে। এখনও বাংলা তথা ভারতের বুক থেকে উগ্র হিন্দুত্ব বাদ চলে যায় নি। কারণ ইংরেজ শাসক কৌশলে এই জাতি দাঙ্গা লাগিয়ে দিত, হিন্দুদের মধ্যে নয়। যেখানে যেমন সেই ভাবে, ইসলাম আর হিন্দুদের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে দিত, যাতে করে এই বাঙালি জাতি এক হতে না পারে। যেমন ইকতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি করে ছিলেন। নিম্ন বর্ণের হিন্দু বা সনাতন ধর্মের মানুষ কে ধর্ম পরিবর্তন করে নিজের ধর্মে নিয়ে আসতে পরবর্তীতে ঐ ধর্ম পাল্টে ফেলা ইসলাম তথা হিন্দুরা তাদের উপর সমাজের উচ্চ বর্ণের অত্যাচারের বদলা নিয়েছে। এখন ও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় এই অত্যাচার ভীষণ ভাবে চলে। ব্রিটিশ শাসক যেটা শুরু করে দিয়ে গেছেন, স্বাধীনতা দেবার নাম করে, আর এই ধর্মের নামে দেশ ভাগের মদত দাতা সেও কিছু উগ্র হিন্দুত্ব বাদী। ব্রিটিশ জানে যে বাঙালি জাতি হিসেবে যদি এক হতে পারে তবে ভবিষ্যতে ভারত কে দাবিয়ে রাখা যাবে না। সে কারণেই আমাদের মধ্যের সেই সেন বংশের বংশ ধর উগ্র হিন্দুত্ব বাদীর দল যখনই ইংরেজ শেষ লাট সাহেব, লর্ড মাউন্ট ব্যটনের কাছে বাংলা ভাগের আবেদন করেছে। সাথে সাথে মঞ্জুর করেছে, ব্রিটিশদের অনেক দিনের ইচ্ছা, যেটা 1905 সালে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। সেই গোপন ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে, সাধারণ হিন্দু ধর্মের লোকজন তথা বাঙালি, আজও থামেনি জতি দাঙ্গা, একটি উগ্র সম্প্রদায়ের উগ্রতা কে উস্কে দিয়েছে, আমাদের কিছু উগ্র মানুষ। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ বিভিন্ন সময়ে টুকরো খবর চলে আসে। এটি ঐ ধর্মের নামে হচ্ছে বটে কিন্তু, খলজির আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল লুট পাট সেটাই এখনও চলছে। জোর করে সম্পত্তি দখল, উচ্ছেদ, তাড়িয়ে দেওয়া,বাংলার হিন্দুরা আজ নিজ দেশে প্রবাসী, তাদের কোন অধিকার নেই। জানি না এই ধর্মের নামে অত্যাচার কবে বন্ধ হবে। জানি না, ঈশ্বর আল্লাহ, গড, এরা মানুষ সৃষ্টি করেন না ধর্ম সৃষ্টি করে পাঠান। সব ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা স্বর্গ আছে, আসলে তা নয় কিছু ধন সম্পদ বা ক্ষমতা লোভী মানুষ ধর্মের নামে নিজের ক্ষমতা জহির করতে নিজের ধর্মের কিছু মানুষ কে উস্কে দেন। নিজেকে ভগবানের দূত বা আল্লাহর দূত বলে প্রচার করে ক্ষমতা বা টাকার বা সম্পদের মালিক হন। আর মজা দেখনে কেমন মানুষ মারামারি করে মরছে। সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ বা ঈশ্বর যেই হোন না কেন, কেউ তার সৃষ্টি কে ধ্বংস করতে পাঠায় না। জানা নেই, এরকম সৃষ্টি কর্তা কেউ আছেন কি না? কারণ আজ পর্যন্ত কোন সাধক, দূত, যাজক কেউ বলতে পারেন নি, তিনি স্ব চক্ষে সৃষ্টি কর্তা কে দেখেছেন, বা স্বর্গ, বা নরক বলে কিছু আছে। আসলে এই, সব ধর্মের কারবারিরা নিজের সম্পদ ও প্রতিপত্তি বাড়াতে ধর্মের নামে মানবতা কে ধ্বংস করে যাচ্ছেন। সে কারণেই আজ মহামারীর আকারে এসেছে ধ্বংস লীলা, এখনই বোঝা যাচ্ছে বিজ্ঞান বড়ো, হাসপাতাল চিকিৎসা ঔষধ, চাই বেঁচে থাকতে, এই মহামারী মানুষের দ্বারা তৈরি, পৃথিবীর বুক থেকে ঐ ধর্মান্ধ মানুষ গুলো কে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই যারা এখনও বলছে আল্লাহর গজব, বা ঈশ্বরের তৈরি, এই সময়ে দরকার ভ্যাকসিন বা টিকা বা ঔষধ, মন্দির মসজিদ গির্জার জলপড়া কোন কাজ দেবে না। ঐ যে ভারতের কোন মন্দির খুলেছে প্রণামী পাবার আশায় পুরোহিত সহ বেশ কয়েক জন আক্রান্ত। আসুন আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করি ধর্মের নামে মানবতা ধ্বংস কারী স্ব ঘোষিত দেবতার দূত দের বয়কট করি। আর নয় অনেক হয়েছে, অনেক মানুষ খুন করেছ, ধর্মের নামে, আল্লাহ তোমার বেঁচে থাকার অধিকার যেমন দিয়েছে তেমনি ঈশ্বর এদেরও বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে, তুমি ছিনিয়ে নেবার কে? এখানেই তুমি মানবতার শত্রু, তুমি দেবতা বা আল্লাহর বর পুত্র বা দূত হতে পার না। তোমার কথায় যারা এই জঘন্য কাজ করছে তারাও ঐ সৃষ্টি কর্তার চোখে অপরাধী।
এত গেল একটা দিক, আমার আজকের বিষয় কিন্তু
এটা নয়। আমার প্রশ্ন ধর্ম এলো কীভাবে? ইতিহাসে যতদূর পড়েছি। মানুষ যখন একটু একটু করে সভত্যা গড়ে তুলেছে, তাদের সামনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য বিজ্ঞানের ধারনা ছিল না। সেই কারণেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় গুলো কে ভয় পেয়েছে, এবং এক একটি দেবতার আবির্ভাব ঘটেছে, বা দেবতা বলে পূজো করে এসেছে। বন্যা, ঝড় বৃষ্টি, অকাল মৃত্যু, মহামারী, পক্স, বা বসন্ত, সাপের কামড়, আরও নানা ঘটনা কে তারা দেবতার দ্বারা পরিচালিত বলে, তাদের পূজো করে গেছে। ভেবে দেখুন পবন, ঝড়ের দেবতা, বন্যা বা জলের দেবতা বরুণ, বাজ নিক্ষেপের দেবতা ইন্দ্র, পক্স বা বসন্তের দেবী শীতলা, সাপের দেবী মনসা, বাঘের দেবী বনবিবি, ভুত প্রেত দের ঠান্ডা করতে শিব, অসুরদের দমন করতে মা দুর্গা, কালী, লেখা পড়া সরস্বতী, ধন বা টাকার দেবী লক্ষী, ধর্ম যমরাজ এবং সর্বোপরি ব্রহ্মা যিনি এই পৃথিবীর সৃষ্টি কর্তা। এরকম হাজারো দেবতা, সেই আদিম যুগ থেকে পুজো হয়ে আসছে, আর এরমধ্যে অগ্নির কথা বলা হয়নি। আমি যতদূর জানি মানুষের সভ্যতা এগিয়ে গেছে, ধীরে ধীরে সে পশুপালন শিখেছে, পশুর খাবার যোগার করতে গিয়ে যাযাবর হয়েছে, আর কৃষি কাজ শিখে সে যাযাবর জীবনের ইতি টেনেছে। মানুষ যত সভ্য হয়েছে, গোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে, এক গোষ্ঠীর সাথে আরেক গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব বেড়েছে, লড়াই যুদ্ধ এসেছে, বেশি সভ্য মানুষ তখনও যারা লেখাপড়া বা ভালো সভ্য হয়ে উঠতে পারে নি। কাঁচা মাংস, খেত, ফলমূল খেত গাছে গাছে ঘুরে বেড়াত, সেরকম মানুষ কে রাক্ষস, বা বানর নামে ডাকা হত, পরে এরা যখন ঐ সভ্য জাতির সংস্পর্শে এসেছে, চাষ শিখেছে, পশুপালনকে জীবিকা করেছে। এরা অনার্য, আর ঐ সুসভ্য মানুষ আর্য, এসেছে আর্য সভ্যতা, অনার্য দের সাথে যুদ্ধ সেতো আমরা রামায়ণ, মহাভারতে পাই। আর্য দের দ্বারা ভারতে এসেছে ব্রাহ্মণ্যবাদ, আর্যরা ধর্ম দিয়ে মানুষ কে এক করতে চেষ্টা করে গেছে,পরবর্তীতে আর্য এবং অনার্য দের দেবতারা যে এক এবং অভিন্ন তা আমরা অনেক ধর্ম গ্রন্থে পাই। আমি যতদূর জানি শিব, কালী, মনসা, ইত্যাদি অনার্য দের দেবতা। আর্যরা তাদের সভত্যা টিঁকিয়ে রাখতে, কাজের ভিত্তিতে সমাজ কে চার টি ভাগে করে দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র, ব্রাহ্মণের কাজ ধর্ম পালন পূজা যাজ্ঞ যজ্ঞ, এবং ধর্মীয় শিক্ষাদান। আর ক্ষত্রিয় দেশ রক্ষা এবং দেশ শাসন করার জন্য, বৈশ্য চাষবাস ব্যবসা বানিজ্য, এবং এই তিন ভাগের সেবা করার জন্য শুদ্র, সেবা মানে পা টেপা নয়। সভ্য যখন চুল দাড়ি নখ কাটা, ঘর বাড়ি তৈরি করে দেওয়া, পথ ঘাট পরিষ্কার করা ইত্যাদি। পরবর্তী কালে এই কাজের জন্য সমাজ ভাগটাই ভীষণ ভাবে জাতিভেদে পরিবর্তন হয়েছে। ব্রাহ্মণরা নিজেকে সবার উপরে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এই বিপত্তি, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠা আর্য সভ্যতার ধ্বংসের কারণ, ব্রাহ্মণ দের এই কর্তৃত্ব এবং অপর কে ছোট করে নিজে বড়ো হওয়ার মানসিকতা আর নীচের ঐ শুদ্র কে পাত্তা না দেওয়া, কিছু ক্ষেত্রে বৈশ্য দের সাথেও সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা, এবং দমন পীড়ন, সনাতন ধর্মের প্রতি এদের অনীহা দেখা দিয়েছে, জণ্ম নিয়েছে, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, শিখ ধর্ম, তারও পরে খ্রীষ্টান ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম। ইতিহাসে যতদূর পড়েছি,যেখানে খ্রীষ্টান ধর্ম বা ইসলাম ধর্ম প্রচলিত হয়েছে, সেখানেও আগেই মানুষ নানা দেবদেবীর পূজো করত। যেমন রোমান বা গ্রীক পুরাণের অনেক দেব দেবীর পুজোর উল্লেখ আছে। আমি আগেই বলেছি সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ সেই আদিম কাল থেকে নানা দেবদেবীর পূজা করে এসেছে। পুরোহিত তথা ব্রাহ্মণ্যবাদ মানুষ কে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, যে কারণে এই সব এক ঈশ্বর, ব্যক্তি কে ঈশ্বরের দূত এবং তার কথা গুলো বানী বা ঈশ্বরের বাণী এভাবেই পরবর্তী ধর্ম গুলো এসেছে। বিশ্ব অনেক ধর্মযুদ্ধ দেখেছে। অতিতে বিভিন্ন সময়ে এই ধর্ম যুদ্ধ হয়েছে, এমনকি একই ধর্মের মধ্যেও গোষ্ঠী বা দলের মধ্যে এই ধর্ম যুদ্ধ হয়েছে।
এবার আমরা আমার জণ্ম ভূমি বাংলার কথায় আসি, কারণ এখানে আজও ধর্মের নামে মানবতা ভুলুণ্ঠিত। ইসলাম ধর্মের মানুষ আজও সনাতন হিন্দুদের উপর অত্যাচার করে যাচ্ছে, এই যে অত্যাচার আজ থেকে নয়। যুগ যুগ ধরে এই একটা ধর্মের মানুষ যারা ধর্মের নামে মানুষ খুন করে, অন্য ধর্মের মানুষ কে মানুষ বলে মনে করে না। কোন ধর্মের সাধক ঈশ্বর বলুন, ভগবান বলুন আল্লাহ বলুন তাকে চোখে দেখেনি। তিনি দূত পাঠিয়ে বানী বলতে বলেছেন। আমার একটা প্রশ্ন সৃষ্টি কর্তা তিনি কী সব ধর্মের এক একজন আলাদা, তিনি জাত বা ধর্ম দিয়ে পাঠান, না গায়ে বা পিঠে ছাপ মেরে পাঠান এ ইসলাম এ হিন্দু এ খ্রীষ্টান, এ বৌদ্ধ আমি জানি না। কারণ আমি ও ঈশ্বর কে চোখে দেখিনি জানি না স্বর্গ বলে কিছু আছে কি না! যা লিখছিলাম, অনেকেই বলেন বা ইতিহাসের পাতায় পড়েছি, এই বাংলায় ইসলাম এসেছে, খলজির হাত ধরে। অর্থাৎ সেন বংশের পতনের মধ্য দিয়ে। যদি আমরা ইতিহাস দেখি তবে দেখা যাবে এই সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন কৌলিন্য বা কুলীন প্রথা চালু করে ছিলেন। অর্থাৎ জাতি ভেদ কে কঠোর ভাবে পালন করতে হবে, না হলে শাস্তি পেতে হবে। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবাদ কঠোর ভাবে বলবৎ করে তুলেছিলেন। আর এই কঠোরতা সেন বংশের পতনের কারণ, উগ্র হিন্দুত্ব বাদ বা সেন বংশের রাজা দের পাশ থেকে নিম্ন বর্ণের মানুষের সরে যাওয়ার কারণে সেন বংশের পতন ডেকে আনে, না হলে কথিত আছে মাত্র পঁচিশ জন ঘোড় শোওয়ার সৈন্য বাংলার সেন বংশের পতন ঘটিয়ে ছিল। ইতিহাসের পাতায় যেটা আছে রাজা লক্ষ্মণ সেন বুড়ো হয়ে ছিলেন, কিন্তু তার সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল না, তারা বাধা দেয় নি। নিশ্চয়ই দিয়েছে, কিন্তু ঐ পঁচিশ জনের সাথে যুদ্ধ করে পারেনি, না সংখ্যায় ওর থেকে কম ছিল। কেউ কেউ বলেন রাতের অন্ধকারে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন, সেই কারণেই পরাজিত হন। আমার তো মনে হয়, তা নয় উগ্র হিন্দুত্ব বাদের জন্য নিম্ন জন জাতি রাজা সেনাবাহিনীতে নিতেন না, নিলেও তারা সংখ্যায় কম ছিল, আর ঐ সব মানুষের মনে ক্ষোভ ছিল, সেই সব কারনেই, সেন বংশের পতন।
বাংলায় সেই শুরু হয় ইসলামের অত্যাচার, যা আজও চলছে, কারণ উগ্র হিন্দুত্ব বাদ নিম্ন বর্ণ বা শুদ্র কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈশ্যরাও পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বাংলায় ইসলাম বিস্তারে সাহায্য করেছে। এখনও বাংলা তথা ভারতের বুক থেকে উগ্র হিন্দুত্ব বাদ চলে যায় নি। কারণ ইংরেজ শাসক কৌশলে এই জাতি দাঙ্গা লাগিয়ে দিত, হিন্দুদের মধ্যে নয়। যেখানে যেমন সেই ভাবে, ইসলাম আর হিন্দুদের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে দিত, যাতে করে এই বাঙালি জাতি এক হতে না পারে। যেমন ইকতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি করে ছিলেন। নিম্ন বর্ণের হিন্দু বা সনাতন ধর্মের মানুষ কে ধর্ম পরিবর্তন করে নিজের ধর্মে নিয়ে আসতে পরবর্তীতে ঐ ধর্ম পাল্টে ফেলা ইসলাম তথা হিন্দুরা তাদের উপর সমাজের উচ্চ বর্ণের অত্যাচারের বদলা নিয়েছে। এখন ও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় এই অত্যাচার ভীষণ ভাবে চলে। ব্রিটিশ শাসক যেটা শুরু করে দিয়ে গেছেন, স্বাধীনতা দেবার নাম করে, আর এই ধর্মের নামে দেশ ভাগের মদত দাতা সেও কিছু উগ্র হিন্দুত্ব বাদী। ব্রিটিশ জানে যে বাঙালি জাতি হিসেবে যদি এক হতে পারে তবে ভবিষ্যতে ভারত কে দাবিয়ে রাখা যাবে না। সে কারণেই আমাদের মধ্যের সেই সেন বংশের বংশ ধর উগ্র হিন্দুত্ব বাদীর দল যখনই ইংরেজ শেষ লাট সাহেব, লর্ড মাউন্ট ব্যটনের কাছে বাংলা ভাগের আবেদন করেছে। সাথে সাথে মঞ্জুর করেছে, ব্রিটিশদের অনেক দিনের ইচ্ছা, যেটা 1905 সালে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। সেই গোপন ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে, সাধারণ হিন্দু ধর্মের লোকজন তথা বাঙালি, আজও থামেনি জতি দাঙ্গা, একটি উগ্র সম্প্রদায়ের উগ্রতা কে উস্কে দিয়েছে, আমাদের কিছু উগ্র মানুষ। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ বিভিন্ন সময়ে টুকরো খবর চলে আসে। এটি ঐ ধর্মের নামে হচ্ছে বটে কিন্তু, খলজির আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল লুট পাট সেটাই এখনও চলছে। জোর করে সম্পত্তি দখল, উচ্ছেদ, তাড়িয়ে দেওয়া,বাংলার হিন্দুরা আজ নিজ দেশে প্রবাসী, তাদের কোন অধিকার নেই। জানি না এই ধর্মের নামে অত্যাচার কবে বন্ধ হবে। জানি না, ঈশ্বর আল্লাহ, গড, এরা মানুষ সৃষ্টি করেন না ধর্ম সৃষ্টি করে পাঠান। সব ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা স্বর্গ আছে, আসলে তা নয় কিছু ধন সম্পদ বা ক্ষমতা লোভী মানুষ ধর্মের নামে নিজের ক্ষমতা জহির করতে নিজের ধর্মের কিছু মানুষ কে উস্কে দেন। নিজেকে ভগবানের দূত বা আল্লাহর দূত বলে প্রচার করে ক্ষমতা বা টাকার বা সম্পদের মালিক হন। আর মজা দেখনে কেমন মানুষ মারামারি করে মরছে। সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ বা ঈশ্বর যেই হোন না কেন, কেউ তার সৃষ্টি কে ধ্বংস করতে পাঠায় না। জানা নেই, এরকম সৃষ্টি কর্তা কেউ আছেন কি না? কারণ আজ পর্যন্ত কোন সাধক, দূত, যাজক কেউ বলতে পারেন নি, তিনি স্ব চক্ষে সৃষ্টি কর্তা কে দেখেছেন, বা স্বর্গ, বা নরক বলে কিছু আছে। আসলে এই, সব ধর্মের কারবারিরা নিজের সম্পদ ও প্রতিপত্তি বাড়াতে ধর্মের নামে মানবতা কে ধ্বংস করে যাচ্ছেন। সে কারণেই আজ মহামারীর আকারে এসেছে ধ্বংস লীলা, এখনই বোঝা যাচ্ছে বিজ্ঞান বড়ো, হাসপাতাল চিকিৎসা ঔষধ, চাই বেঁচে থাকতে, এই মহামারী মানুষের দ্বারা তৈরি, পৃথিবীর বুক থেকে ঐ ধর্মান্ধ মানুষ গুলো কে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই যারা এখনও বলছে আল্লাহর গজব, বা ঈশ্বরের তৈরি, এই সময়ে দরকার ভ্যাকসিন বা টিকা বা ঔষধ, মন্দির মসজিদ গির্জার জলপড়া কোন কাজ দেবে না। ঐ যে ভারতের কোন মন্দির খুলেছে প্রণামী পাবার আশায় পুরোহিত সহ বেশ কয়েক জন আক্রান্ত। আসুন আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করি ধর্মের নামে মানবতা ধ্বংস কারী স্ব ঘোষিত দেবতার দূত দের বয়কট করি। আর নয় অনেক হয়েছে, অনেক মানুষ খুন করেছ, ধর্মের নামে, আল্লাহ তোমার বেঁচে থাকার অধিকার যেমন দিয়েছে তেমনি ঈশ্বর এদেরও বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে, তুমি ছিনিয়ে নেবার কে? এখানেই তুমি মানবতার শত্রু, তুমি দেবতা বা আল্লাহর বর পুত্র বা দূত হতে পার না। তোমার কথায় যারা এই জঘন্য কাজ করছে তারাও ঐ সৃষ্টি কর্তার চোখে অপরাধী।
No comments:
Post a Comment