আমি পশ্চিমবঙ্গরে বাসিন্দা, আমার পড়াশোনা বাম আমলে, একটু তুলনা করি এখন কার পড়ানোর বিষয় এবং তার বর্তমান শিক্ষক দের আচার আচরন। একজন শিক্ষক তার কাজ কি স্কুলে ছাত্র ছাত্রী দের সাথে সুন্দর ব্যবহার এবং তাদের পড়ানোর। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ভীষণ কঠিন কাজ। কারণ একটা বিষয় ভাবুন পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা সে তার বাবা মা কে ছেড়ে বিদ্যালয়ে আসে পাঠ নিতে সে কিছু হয় তো শিখে আসে আবার না শিখে আসতে পারে। তাকে শেখাতে হবে হাতে ধরে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বর্তমানে কিছু শিক্ষক মনে হয় শেখাতে আসেনি। তারা আসি যাই বেতন পাই কাজ কর্মের কিছু নাই। আর এদের না আছে শিশু শিক্ষা সম্পর্কে কোন জ্ঞান বা ধারণা অর্থাৎ চাইল্ড সাইকোলজি সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। এরা নিজেদের বিদ্বান ভাবে এবং সেটা ঐ শিশু দের উপর প্রয়োগ করে। একজন পিছিয়ে পড়া শিশু কে কিভাবে শেখাতে হবে সেই ধারণা নেই। আর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক দের নিয়ে ।সেই ধারণা নেই, অভিভাবক দের সাথে দূর ব্যবহার নিত্য ঘটনা।একটা ঘটনা বলি এটা থেকে বোঝা যাবে চাইল্ড সাইকোলজি সম্পর্কে এদের জ্ঞান কেমন, মনে করুন চতুর্থ শ্রেণির কোন ছাত্র ছাত্রী প্রেম ভালবাসা নিয়ে কোন কথা বলেছে, এই শিক্ষক কুল সেটা নিয়ে অভিভাবক কে ফোন করে ডেকে তাকে অপমান করবে মনে হবে 'আই লাভ ইউ বা প্রেম করে' এই শব্দ গুলো ওদের বলা উচিত নয় আর তার সাথে আছে মার, এখানেই প্রমাণ হয় বর্তমান দলের সমর্থক শিক্ষকদের শিক্ষা বিজ্ঞান বা চাইল্ড সাইকোলজি সম্পর্কে জ্ঞান নেই। কারণ সাইকোলজি অনুসারে ঐ বয়সের শিশু শৈশব ছেড়ে কৈশোরে পা দিয়েছে ওদের জানার আগ্রহ কথা এবং বড় দের থেকে শোনা কথা এবং তাদের আচার আচরণ নকল করবে এটা স্বাভাবিক এখানে শিক্ষক শিক্ষিকা ঐ কথা গুলো যে খারাপ নয় সেটা বোঝাবে কারণ ভালবাসা বাবা ছেলেকে আই লাভ ইউ মাই সন বলে আবার পশু প্রেম, বই প্রেম ফুলের প্রেম ইত্যাদি নানা বিষয়ে বলে ওটা কে সহজ করে দেওয়ার পরিবর্তে অভিভাবক দের ডেকে নিয়ে একটা ক্যাওস তৈরি করবে আর কথার কথায় স্কুলে আসবি না এই বলে বলে ধমকে এমন করবে যাতে ছাত্র ছাত্রী টি স্কুল আসা বন্ধ করে দেবে এই হচ্ছে বর্তমান কালের শিক্ষক শিক্ষিকা দের জ্ঞান। তবে এদের একটা গুন আছে প্রত্যেকে শাসক দলের সমর্থক জানে শাসক দল কে সমর্থন করলে কেউ কিছু করতে পারবে না । এরা পড়ানোর থেকে অফিসে বসে গল্প করতে বেশি ভালবাসে। ২০০৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যে সব শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে প্রায় সকলেই কম বেশি এই রকম, কারণ তারা চাকরি করতে এসেছে অর্থাৎ এটা তাদের পেশা এখানেই তাদের চিন্তার সাথে অন্য শিক্ষক দের মেলে না। আবার একটা বিষয় খুব লক্ষ্যনীয় এরা সকলেই বর্তমান শাসক দলের সমর্থক। সময়ে আসব না, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকব না। চল্লিশ মিনিট ক্লাস দশ পনেরো মিনিট অফিস রুমে কাটিয়ে তার পর ক্লাসে যাব। বোর্ডে কিছু লিখতে দিয়ে অন্য শ্রেণিতে গিয়ে অন্য শিক্ষকের সাথে গল্প করব। ছাড়ুন শিক্ষকদের কথা শাসক দলের সমর্থক শিক্ষক দের কথা যত না বলা যায় তত ভালো। বেশি বললে শাস্তি পেতে হবে। এবার আসুন বর্তমান সরকারের এই জঘন্য সিলেবাস বা পাঠক্রম নিয়ে, প্রাক প্রাথমিকের মজারু কুটুম কাটাম ও কিছুই নেই। ওই বই দুটো সারা বছর পড়াতে হবে আবার কোন মূল্যায়ন বা পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। অথচ ২০১৩ সালের আগে এই বয়সে এরা বাংলা অমার গনিত এবং ইংরেজি পড়ত। যদিও ইংরেজি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাম আমলের প্রথম দিকে পরে ১৯৯৭ সালে পুনরায় চালু করা হয়েছিল। সিলেবাস ছিল বাংলা ছড়া দিয়ে শুরু ধীরে ধীরে শব্দ ভেঙে বর্ণ শেখা, আবার ইংরেজি ছিল বাড়িতে বা বিদ্যালয়ে যে সব জিনিস পত্র আছে বা প্রতিদিনে বলা কিছু ইংরেজি শব্দ সেখান থেকে বর্ণ লেখা শেখা। .অঙ্ক ছিল যোগ ফল এক থেকে নয় এর মধ্যে এবং যোগ ও বিয়োগের ধারণা এগুলো ঐ পাঁচ বছরে শিখত। এবার ভাবুন বেসরকারি স্কুলের কথা ঐ বয়সে তারা কে জি ওয়ানে পড়ে পাঠক্রমে সব আছে বাংলা অঙ্ক ইংরেজি সব আছে। এবার প্রথম শ্রেণীর পাঠক্রমে আমার বই তিনটি অংশ, কি আছে সব কিছু ঠিক ঠাক না, না আছে সঠিক ভাবে শেখানোর অঙ্ক ইংরেজি বাংলা টা কিছু ঠিক আছে। ঐ যে আগে বললাম পাঁচ বছরের প্রাক প্রাথমিক যা শিখত তার উপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক্রম গুন ভাগ নামতা নামতা শেখানোর পদ্ধতি টা সুন্দর করে বলা ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণির ও বাংলা অঙ্ক ইংরেজি বই ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির উপর সাথে সমতা রেখে তৃতীয় শ্রেণির পাঠক্রম তৈরি করা হয়েছিল। এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে ইংরেজি যে টুকু আছে কিছুই নয় অথচ তৃতীয়া শ্রেণিতে উঠে ইংরেজি পাঠক্রম ও সে বলার নয়। উইংস নামে তিন টি পর্বের তিন টি বই আর বাটার ফ্লাই নামে দেড় শো পাতার বেশি একটা ইংরেজি বই অনেক শব্দ আছে যার বাংলা ডিকশেনারি দেখে বাড় করতে হয়। আবার ঐ যে শিক্ষক দের কথা বললাম ওরা তো শিখে এসেছে Cat মানে বিড়াল আর Dog মানে কুকুর। কুকুর মানে কি Dog তখন আর উত্তর নেই। অর্থাৎ ওটা যে একটা আলাদা ভাষা বাংলা থেকে ইংরেজি বা ইংরেজি থেকে বাংলা সেই ধারণা শিক্ষকের নেই। আর বলা হয়েছে বাংলা বলবেন না কেবল রিডিং পড়াতে এবং ছাত্র ছাত্রী রিডিং পড়বে এমন ইংরেজির বহর অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী রিডিং পড়তে পারে না। বই এবং ঐ বড়ো বড়ো গল্প বা লেখা দেখে ভয় পায়। ছাত্র ছাত্রী শিক্ষকের সাথে বা তার বন্ধুর সাথে সামান্য ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না একে অপরের ইংরেজি তে নাম জিজ্ঞেস করা এবং বলা কিছুই জানে না। কারণ ওসব বলার সময় নেই। পাঠক্রম শেষ করতে হবে। অঙ্ক নিয়ে নাই বা বললাম কিছু শেখানোর মত নেই। নামতা সেগুলো সঠিক ভাবে শেখা বা শেখানো যায় না। নামতা যে গুন এই ধারণা থেকে শত গুন পেছনে। আর আমাদের পরিবেশ ওটা বই ছ্যা কিছু শেখানোর নেই জঘন্য ২০১৩ সালের আগে ওর বদলে তিনটি বই ছিল ইতিহাস ভুগোল বিজ্ঞান ওসবের বালাই নেই। সব থেকে জঘন্য বই হল ঐ আমার পরিবেশ, এখনও কয়েকটি বই আছে সেগুলো তে কি চাই পাঁশ শিখছে বোঝা যাচ্ছে না। একটি স্বাস্থ্য বই আরেকটা জাগ বাড়ি। ছাড়ুন চতুর্থ শ্রেণির অবস্থা সে বলে শেষ করা যাবে না। দশটা না বারো টা বই আছে। বিভিন্ন রকমের। এরকম পাঠক্রম দোহাই কার এন সি আর টির। আর বেসরকারি স্কুলের পাঠক্রম দেখুন এর থেকে ভালো সে কারণেই সরকারের বিদ্যালয়ে ভর্তি না করে একটু টাকা পয়সা খরচ করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করছে অভিভাবকরা আর তার উপর আছে শিক্ষকের ঘাটতি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীর তুলনায় শিক্ষক কম আবার এমন আছে ছাত্র ছাত্রী কম শিক্ষক বেশি কিন্তু সেখান থেকে শিক্ষক কে বদলি করা যাবে না কারণ তারা সকলে শাসক দলের সমর্থক। আগে কি ছিল শিক্ষকরা বললে পাঠক্রম পরিবর্তন করা হত এখন কোন শিক্ষক কিছু বলে না। কারণ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ ফেল বলে কিছু নেই পড়াতে হয় না। এবার আসুন মূল্যায়ন ব্যবস্থা, ফর্মে টিভি এবং সামেটিভ মূল্যায়ন, ফর্মেটিভ পাঁচ টি বিষয়ে পঞ্চাশ নম্বর আর সামেটিভ মূল্যায়ন প্রথম পর্ব দশ নম্বর মনে করুন অঙ্ক বই টি তিন শো পাতার একশ পাতা পড়ার পর দশ নম্বরের মূল্যায়ন শিক্ষক হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন করতে কোন টি বাদ দিয়ে কোন প্রশ্ন সে দেবে দশ নম্বরে মূল্যায়ন চার পাঁচ পাতার প্রশ্ন। প্রশ্ন পত্রের পাতা দেখে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র ভয়ে পরীক্ষা দিতে আসে না। শুনবেন নম্বর দেওয়া পাঁচ টা প্রশ্ন দু (2) নম্বর আবার মনে করুন মূল্যায়ন পত্রে এক নম্বরে প্রশ্নের আটটি প্রশ্ন আছে সব গুলো উত্তর ঠিক দিতে পারে তবে সে চার পাবে। দশ নম্বর প্রশ্ন থাকছে মোট ত্রিশ থেকে চল্লিশ টি। আবার দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কুড়ি নম্বর কিছু কিছু শিক্ষক পঁচিশ থেকে ত্রিশ টি প্রশ্ন করে দিচ্ছে। এবার ভাবুন তৃতীয় পর্ব ঐ হারে প্রশ্ন হলে পঞ্চাশ বা ত্রিশ নম্বরে কত গুলো প্রশ্ন থাকতে পারে। আবার এদিকে ওদিকে আছে ২০১৯ সাল থেকে বাংলার শিক্ষা পোর্টাল খুলেছে। কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটাও কম্পিউটার নেই, দিলেও চুরি হয়ে যাবার ভয় আছে। কিন্তু পোর্টালে সব করতে হবে। ভার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (কারণ এখন প্রাথমিকে কোন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয় না চারশো টাকা বেশি বেতন দেবার ভয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দের একটাই প্রমোশন সেটাও এই সরকারের দৌলতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।) এই মূল্যায়নের নম্বর আবার এস এম এস পোর্টালে তুলতে হবে সেটা আবার আরেকটা পোর্টাল কি অদ্ভুত সারা দিন রাত চেষ্টা করে একবার যদি বা খোলে নম্বর এন্ট্রির পর সাব মিট দিন হারগিস নেবে না। দশ দিনের চেষ্টার পর কোন শ্রেণীর একটা বিষয় নম্বর ওখানে তোলা যাবে। আর ঐ যে প্রশ্নের ঠেলায় চোখে সর্ষে ফুল দেখা ছোট শিক্ষার্থীরা কি পেল কারণ পঁচিশ ত্রিশ টির প্রশ্নের উত্তর সকলে পারে না। যদি পাঁচ টি ঠিক করে পেল দুই আর দশটি ঠিক করে পেল চার বড়ো জোর পাঁচ দশে দশে দশ যে ছেলে মেয়েরা পেল তাদের অনেক ভাগ্য ভালো কারণ তারা শ্রেণিতে শিক্ষক শিক্ষিকা দের কথা শোনে মাথা টিপে দেওয়া আর কিছু আছে যা তারা করে দেয় সে কারণেই তাদের উত্তর বলে দিয়ে নম্বর করে দেওয়া হয়। এই রকম শিক্ষা ব্যবস্থা সত্যিই সুনাম পাবার যোগ্য। কিছু বলা যাবে না বেশির ভাগ শাসক দলের সমর্থক, এর সাথে আছে শাসক দলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধি তিনি স্কুলের কোন দরকারে টাকা খরচ করতে হবে স্কুল সেটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ওনার সময় হলে উনি এসে বলবেন তবে হবে এবং কিছু জানুক আর না জানুক শিক্ষক কে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করে তোলা হবে। আর ওদিকে অফিস থেকে বার বার ইউ সি দিতে বলা হবে উনি চেকে স্বাক্ষর করুক আর নাই করুক তাহলে টাকা মেটাবে কে কেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। দারুণ চলছে আর কিছু দিন চললে ঐ ৮৩৩৪ টি বিদ্যালয় নয় পশ্চিমবঙ্গরে সব কটি সরকারি এবং সরকার পোষিত বিদ্যালয় উঠে যাবে। সবশেষে বলি ক্ষমা করে দেবেন কারণ রাজা রামমোহন আর বিদ্যাসাগরের রাজ্যে শিক্ষার এই হাল দেখে খারাপ লাগছে। আবার জাতিয় শিক্ষা নীতি চালু করতে হবে। একটা দোহাই দেওয়া হবে, 'না হলে সারা ভারতের সাথে পিছিয়ে পরবে' । তার পাঠক্রম এবং দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আই সি ডি এস বা একই বিদ্যালয়ে শিক্ষার সব গুলো শুরু করা অর্থাৎ আই সি ডি এস থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সব টাই এক ছাদের তলায় আনার পরিকাঠামো নিশ্চয়ই আছে। আবার বলছি ক্ষমা করে দেবেন।
Anulekhon.blogspot.com
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
বাঙালি ও বর্তমান ভারত।
(ছবিটি নেট থেকে নেওয়া, একটি স্ক্রিনশট।) স্বাধীনতার পূর্বে ভারত কীরকম ছিল, ১৯৪৭ সালে ভাগ হওয়ার পর কেমন হয়েছে। কেন ভারত ভাগ করা হয়েছিল সে ...

-
সরস্বতী পুজোর পদ্ধতি, পরপর যা করতে হবে।১)আচমন ২)বিষ্ণু স্মরণ ৩)স্বত্ত্বি বাচন ৪) স্বত্ত্বি সূক্ত ৫) সাক্ষ্য মন্ত্র ৬) বরণ ৭) সংকল্প ৮) স...
-
আমি এর আগে একটি ব্লগে লিখেছি, দুর্গা যষ্টী পূজার মন্ত্র ।এখানে বলি আমি পণ্ডিত নই, বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে, আর দু একজন ব্রাহ্মণের সাথে কাজ ...
-
ছবি টি কীসের বা কোন প্রাণীর নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। মানুষের প্রথম পোষ মানা প্রথম প্রাণী, হয়তো অনেকেই পড়ে বলবেন এবার নতুন কী এতো আমরা স...
No comments:
Post a Comment