Anulekhon.blogspot.com

Monday, 3 May 2021

কেরল নির্বাচনে ৪০ বছরের ইতিহাস পাল্টে গেল।

 


কেরল দক্ষিণ ভারতের একটি ছোট রাজ্য লোক সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। হিন্দু মুসলিম সব ধর্মের মানুষের বাস, বলা হয় কেরল হচ্ছে ভারতের সব থেকে শিক্ষিত রাজ্য। এই রাজ্যে যতবার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে দেখা গেছে প্রতি বার সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। এবার উল্টো ছবি এই প্রথম কেরলের মানুষ দ্বিতীয় বারের জন্য বামেদের ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে, যে যাই বলুক তার একটাই কারণ বর্তমান প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে কেরলের সাধারণ মানুষের সর্ব রকম ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে কেরলের বাম জোট।বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগেই কেরল সরকার জনগণের পাশে, বিভিন্ন ধরনের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। কেরলের শিক্ষিত জনগণ বুঝে নিয়েছে জাত পাত ধর্ম এসব বাড়িতে এবং মন্দির মসজিদের ভেতরে হবে এগুলো রাস্তায় না নিয়ে আসা ভালো। কেরলের জনগণ ধর্ম কে রাজনৈতিক কার্য কলাপের থেকে দূরে রাখে, ৯৬ % শিক্ষিত জনগণ তাদের জীবন জীবিকার প্রশ্নে কখনো ধর্ম কে টেনে আনে না, সে কারণেই কেরলের জনগণ বিজেপি কে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। এবার একটা প্রশ্ন আসতেই পারে কেরলে সম্ভব হলে বাংলায় কেন সম্ভব হোল না। কারণ একটাই আমাদের রাজ্যে গত ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেস দল। সেই দল কে সম্পূর্ণ ধর্মীয় করতে সাহায্য করেছিল বিজেপি নেতারা। দিল্লির বিজেপি নেতার এই দল কে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ধর্মের উৎসব গুলো কে উৎসাহিত করত। তার একটা উদাহরণ তসলিমার নাসরিনের বাংলা ত্যাগ করতে বাধ্য করার সময়ে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি আজ তৃণমূলের এম এল এ এবং মন্ত্রী, এই সব সাম্প্রদায়িক কাজ কর্ম চলতে থাকে তার সাথে বিভিন্ন ধ্বংসাত্বক আন্দোলন যে গুলো তে অংশ নিতে দেখা যায় বাংলার মানুষ কে, সে জঙ্গলমহল হোক বা পাহাড়, আসলে বাম সরকার ১৯৯০ সালের পর যেটা উপলব্ধি করে ছিল, বাংলায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের পেশাগত শিক্ষার সাথে সাধারণ শিক্ষিত মানুষ বাড়ছে তাদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে স্কুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং পুরোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ, এবং সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের পাশাপাশি, কল কারখানা করতে, সেই লক্ষ্যে গড়ে ওঠে আইটি হাভ, আর ভারী শিল্পের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ এই জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে বাধার সৃষ্টি করা হয়। কারণ পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দিকে বাম সরকার ভূমি বন্টন করে ছিল বর্গাদার বা ভাগচাষি দের অধিকার দিয়েছিল সেই কারণেই জমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ হয়ে গিয়েছিল আগেই অত জমির মালিক কে বুঝিয়ে জমি অধিগ্রহণ সত্য এক দূঢ়হ ব্যপার কিন্তু চেষ্টা করে সেখানেও প্রায় নব্বই শতাংশ সফল হতে পেরে ছিল বাম সরকার। এটাই তৎকালীন বিরোধী বর্তমান শাসক বুঝতে পেরেছিল এসব যদি বাম সরকার করতে পারে তাহলে আর এই বাম সরকার কে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরানো যাবে না। সেই কারণেই ধ্বংসাত্বক আন্দোলন, এই নির্বাচনের আগে স্বীকার করে নিয়েছেন এই শাসক দলের নেতারা। সেই সময় বামেদের সেই পুরোনো কর্মসূচি মানুষ কে সামান্য হলেও দান বিভিন্ন ধরনের সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হতো সাধারণ মানুষের কাছে। সেই গুলো কেই বর্তমান সরকার সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন, কিন্তু পেল কারা যারা এই দলের সমর্থক এবং কর্মী ও কিছু সাধারণ মানুষ। আর ধর্মীয় মেরুকরণ করতে সফল হলো এই দল সংখ্যা গুরুদের মধ্যে যারা অশিক্ষিত তাদের ভোলানো হলো এই সব উপহার দিয়ে আর সংখ্যা লঘুরাও বাদ পরল না, এর মূল কারণ অশিক্ষা এবং শিক্ষিত হয়েও কাজ না পাওয়া। এটা মানতে হবে বাংলা কে ধর্মীয় মেরুকরণে সফল বিজেপি। কারণ দেখুন বর্তমান শাসক এবং বিজেপি নেতৃত্ব জানে এই রাজ্যে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা আছে, যেখানে ধর্মের নামে এমন শিক্ষা দেওয়া হয় যারা নিজেদের বাঙালি তথা ভারতীয় ভাবতেই ভুলে যায়। সবাই ভাবে তারা আরবের লোক এবং আরব থেকে এসেছে, এটা তাদের দেশ নয় লুটে খাওয়ার দেশ। সেই কারণেই এখন একটা কথা ঐ সব মহল্লায় প্রচলিত আছে আমি মুসলিম তুমি বাঙালি। যেটা কেরল বা অন্য কোন দক্ষিণ ভারতের রাজ্যে পাওয়া যাবে না, কারণ সেখানে সঠিক এবং আধুনিক শিক্ষার প্রসার বেশি এখানে বা পশ্চিমবঙ্গে যেটার অভাব খুব। দীর্ঘদিন বাম শাসনে থাকার পরও এই ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে নি পশ্চিমবঙ্গ এই কারণেই আজ পশ্চিমবঙ্গে ধর্মের নামে ভাগ করা সহজ কাজ হয়েছে। কারণ বাম মানেই নাস্তিক এই বিষয় টি ভীষণ ভাবে এই পশ্চিমবঙ্গে প্রচার করা হয়, সেই সময়ে নেতা এমনকি ছোট নীচুতলার কর্মী যদি কোন মন্দিরে পুজো দিত বা নমস্কার করত তবে তাকে দলের মধ্যে নেওয়া তো দূরের কথা তার সম্পর্কে অন্য ধারণা পোষণ করা হত। ভীষণ ভাবে ধর্ম কে এড়িয়ে চলত, কারণ একটা বিষয় এই দল গড়ে তুলতে পারে নি ধর্ম থাক মন্দিরে মসজিদে বাড়িতে, রাজনৈতিক কর্ম কাণ্ড বা সরকারের কাজে ব্যাঘাত না ঘটে, সেটা করতে গিয়ে তারা ঐ সব ধর্ম পালন কারি মানুষ জন কে দূরে সরিয়ে দিতে থাকে আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়ে। এই সব মানুষ বেশিরভাগ টাই গরীব খেটে খাওয়া মানুষ কারণ গরীব মানুষ বেশি করে ধর্ম নিয়ে মেতে থাকে, কারণ তাদের ধারণা ঈশ্বর বা ঠাকুর সব সমস্যা তৈরি করেন তিনিই সব সমাধান করে দেবেন। বর্তমান শাসক দল কে দেখুন সেই গরীব খেটে খাওয়া মানুষ কে ধর্ম পালনে উৎসাহিত করে, সংখ্যালঘু হোক আর সংখ্য গুরু হোক সকল কে। সেই কারণেই এই বিধানসভা নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণ পষ্ট। শিক্ষার ব্যপারে এরা উদাসীন, কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহ। আজ তাই বাংলার মানুষ বামেদের যে ভাবে দেখে এসেছে, সে ভাবে তারা এই ভোটের সময় পায় নি, বাম দল শেষ মুহূর্তে একটি সদ্য গজিয়ে ওঠা দলের সাথে জোট করেছে, সেই দলের নাম টি এবং কাজ মানুষের কাছে অজানা অচেনা, এই কম সময়ে তারা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে নি যে তারা ধর্ম নিরপেক্ষ কারণ একটাই যিনি প্রতিষ্ঠাতা তিনি একজন   ধর্মগুরু। আর এই কারণেই মানুষ বাংলায় বিজেপি কে আটকাতে তৃণমূল কে ভোট দিয়েছে, তারা এটা জানে কিনা জানি না এই শাসক কিন্তু বিজেপির দ্বারা পরিচালিত একটি দল কিছু দিনের মধ্যেই এই রাজ্য কে শাসন করবে বিজেপি এটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। আর এক কি দু বছর অপেক্ষা করুন দেখতে পাবেন বিজেপি এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে। কারণ বর্তমান শাসক দলের সাথে এদের একটা চুক্তি আছে, না হলে ভাবুন চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারি বালির তোলা কয়লা পাচার গরু পাচার সব তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে দিল্লির সরকার। গোপন চুক্তি ওটাই সরাসরি বিজেপি জিতে ক্ষমতা দখল না করে এই ভাবে ক্ষমতা দখল করা, যা তারা অনেক রাজ্যে করেছে। সব শেষে সকল নির্বাচিত প্রতিনিধি দের অনুরোধ আপনারা বাংলার মানুষের স্বার্থে দলে থাকবেন এবং আপনি বা আপনারা আপমোর বাঙালির ভালো চাইবেন এটাই চাইব। দলমত নির্বিশেষে আপনার পরিষেবা পাবে এই আশা রাখি। সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ।

No comments:

Post a Comment

বাঙালি ও বর্তমান ভারত।

 (ছবিটি নেট থেকে নেওয়া, একটি স্ক্রিনশট।) স্বাধীনতার পূর্বে ভারত কীরকম ছিল, ১৯৪৭ সালে ভাগ হওয়ার পর কেমন হয়েছে। কেন ভারত ভাগ করা হয়েছিল সে ...