আদীম সভ্যতা কীভাবে গড়ে উঠেছিল, ইতিহাসে তা আমরা অনেক পড়েছি। কোথাও বলা নেই, হিন্দু ধর্মের এত দেবদেবী কোথা থেকে এলেন? ইতিহাসের পাতায় পড়েছি গ্রীস, রোমান সভ্যতার মানুষও নানা দেবদেবীর পূজা করত, কেউ সমুদ্রের দেবতা, কেউ চাষাবাদের, কেউ যুদ্ধের, প্রতিটি বিষয়ে একজন করে দেব বা দেবী ছিলেন হিন্দু বা ঐ দুই সভ্যতার। আমার জানা পড়ার মধ্যে দিয়ে যতটুকু জানি মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন অতি প্রাকৃতিক ঘটনা, যেমন বন্যা, বাজ পড়া, ঝড়, দাবানল, বিষাক্ত প্রানীর কামড়ে মৃত্যু বিভিন্ন ধরনের রোগকে ভয় করত, আর এসবের হাত থেকে রক্ষা পেতে নানা দেবদেবীর পূজা করত। এখনও পর্যন্ত মানুষ সে সব করে আসছে। মানুষের ভালোর জন্য, মানুষের উপকারের জন্য ধর্মের আগমন বা দেবদেবীর পূজা ক্ষতি করার জন্য নয়। পাশাপাশি ঐ যুগেও মানুষ নিজের অজান্তেই বিজ্ঞানের নানা বিষয় আবিষ্কার করেছে। আগুন জ্বালতে শেখা, কৃষি কাজ শেখা, পাথরের অস্ত্রের পরিবর্তে ধাতুর অস্ত্র ব্যবহার করা, অর্থাৎ ধাতু আবিষ্কার, গুহা জীবন ছেড়ে ঘরবাড়ি তৈরি করা, পশুর চামরা, গাছের ছাল পাতা কে পরিত্যাগ করে সুতো তৈরি করে সেটা দিয়ে পোশাক তৈরি করে পরা। এসব কাজে ধর্ম কিছু সময় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সেই, সেই কারণেই গ্যলেলিও, কোপারনিকাশ, ব্রুন, সক্রেটিস, আর কয়েক জন বিজ্ঞানের চিন্তা নায়ক কে ধর্মের কাছে হার মানতে হয়ে ছিল, কিন্তু বিজ্ঞান হেরে যায়নি বিজ্ঞান হেরে গেলে বা ঐ ধর্মের ভয়ে বিজ্ঞান চর্চা থেমে গেলে মানুষ আজ রকেট চেপে চাঁদের দেশে পাড়ি দিতে পারত না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এত উন্নত হতো না। পক্স বা বসন্তের টিকা আবিষ্কার হতো না, মানুষ মারা যেত যক্ষায় কলেরায় আর শীতলা দেবির পুজো করে যেত বসন্ত ভালো করার জন্য। বর্তমানে আমরা কি কি দেখছি, এই সব আবিষ্কার বা বিজ্ঞান কে পাত্তা না দিয়ে একটা বিশেষ ধর্মের মানুষ যে ধর্ম টি ধর্মীয় উগ্রপন্থা ছাড়া আর কিছু জানে না। 1400 বছর আগে এই ধর্মের সুচনা অস্ত্রের ঝঙ্কানিতে। সেই অস্ত্র এখন ও ব্যবহার করে যাচ্ছে, এখন যে সব আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে সে গুলো সব অপর দেশের আবিষ্কার বা তৈরি নিজেরা কিছু করতে পারে না, কেবল ধর্মের নামে মানুষ খুন করা ছাড়া। এটি নাকি শান্তির ধর্ম, ভারতের বেশিরভাগ এই শান্তির ধর্মের লোকজন অবশ্যই বর্ণ হিন্দু দের অত্যাচারে ধর্ম পরিবর্তন করে নিয়েছে। কারণ মোঘল আমলের শেষ দিকে, ধর্মীয় বিভাজন প্রচণ্ড আকার ধারণ করে ছিল। এই সময় বণিক ইংরেজ ও ফরাসি দের প্রবেশ ঘটে ভারতের মাটিতে দূর্বল মোঘল রাজত্ব স্থানীয় সামন্ত রাজা নবাব দের রমরমার সুযোগ কাজে লাগাতে এক মূহুর্ত দেরি করে নি ধূর্ত ইংরেজ অচিরেই বণিক রূপী ইংরেজ শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। নবাবি কর বা খাজনা আর ইংরেজ দের জুলুম কর বা খাজনা বাংলাদেশের বুকে নেমে আসে চরম দূর্দশা, আস্তে আস্তে গোটা ভারত দখল করে নেয় ইংরেজ শাসক, ভারতীয় ব্যবসা বানিজ্য ধ্বংস করে দেয় ইংরেজ শাসন শুরু করে বিলেতি দ্রব্যের বিক্রি বাটা আর শাসকের কর খাজনা, জমিদারি ব্যবস্থা জোরদার ব্যবস্থা কায়েম করে গোটা দেশে, শুরু করে দু তরফে অত্যাচার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন ভাবে বিচ্ছিন্ন আন্দোলন শুরু করে, সমান তালে চলে অত্যাচার। ইংরেজ সরকার বুঝতে পারে ভারত কে শাসন করতে এদের মধ্যে জাতি গত বিচ্ছেদ ঘটতা হবে, শুরু করে ধর্মের নামে মানুষে মানুষে নানা রকম বিভাজন, হিন্দু মুসলমান তো ছিলই, যেখানে মুসলিম বেশি সেখানে প্রচার করা হয় মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়েছে, আর উল্টো টা হিন্দু এলাকায় মসজিদ হলে বলা হয় ওখানে মন্দির ছিল ভেঙে মসজিদ হয়েছে। বাবরি মসজিদের ইতিহাস পড়ুন দেখা যায় ইংরেজ আমলে এই মসজিদ নিয়ে হিন্দু মুসলিম লড়াই। এতো গেলো হিন্দু মুসলিম ভাগ, এবার সুকৌশলে হিন্দু ধর্মের উচ্চ বর্ণ কে ইংরেজ তার বিভিন্ন পদে বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ করতে থাকে। পিছিয়ে পরে তপশীল জাতির মানুষ, অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের মধ্যেও কৌশলে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে দেখুন ঠিক এভাবেই স্বাধীন দেশের শাসক দেশ পরিচালনা করছে। জাতি ধর্ম নাগরিকত্বের প্রমাণ চাই নানান আইন। বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব সেনা জওয়ান দের মৃত্যু, এসব আপানার আমার দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য, এর আড়ালে কি হচ্ছে, দেশের সম্পদ রেল, খনিজ সম্পদ তেল, লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সব কয়েক জন শিল্পপতি কে বিক্রি করে দিচ্ছে। তারা এগুলো কিনছে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে, ঋণ শোধ করার দরকার নেই, কিছু দিন পর ঋণ মুকুব করে দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা আর আমি আপনি ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে নানা অজুহাতে টাকা কেটে নিচ্ছে, কখনো বলছে এ্যাকাউন্টে 500 হাজার বা তার বেশি টাকা রাখতে হবে না হলে টাকা কাটা যাবে। কোন সাধারণ মানুষ ঋণ নিয়ে শোধ না করে যাবে কোথায় তার ভিটে মাটি বিক্রি করে আদায় করা হচ্ছে। আবার সাধারণ মানুষের 25 হাজার টাকা ঋণ পেতে হলে জুতোর শুকতলা খয়ে যায় আর এদের ক্ষেত্রে সব মাফ তাও কয়েক হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্র শক্তি ভুলিয়ে রাখতে চাইছে, ধর্ম নিয়ে, এত বড়ো একটা মহামারীর সময় যেন মনে হলো গরীব খেটে খাওয়া মানুষ গুলো মানুষ নয়। করোনা আসছে লকডাউন দেরিতে ঘোষণা, বিদেশ বিশেষ করে যেসব দেশে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে বেশি সেখান থেকে দেশের মানুষ কে বিনামূল্যে বিমানে করে ফেরত আনছে আরও যাতে করোনা ছড়িয়ে পড়ে তার ব্যবস্থাপনা পাকা করে তুলেছে এই, মানে কোন ব্যাপার না, ঘণ্টা, কাঁসর, থালা বাজাও একজন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভাবা যায় মোমবাতি জ্বালাতে বলছেন। ফুল ছড়িয়ে আনন্দ করা হচ্ছে, রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে গোমুত্র বিলি করছে, কখনো বলছে পাঁপড় খেলে করোনা চলে যাবে আবার এর মধ্যে মন্দির, আর মূর্তি বসানো চলছে। ( রাম মন্দির, হনুমানের মূর্তি, রামের মূর্তি, শিবের মূর্তি, আগেই হয়েছে বল্লভ ভাই প্যাটেলের মূর্তি) এক দিকে বিজ্ঞানের অগ্রগতি নতুন নতুন আবিষ্কার আরেক দিকে ধর্ম এটা কে ধর্ম বলা যাবে যে ধর্ম বিজ্ঞান মানে না, মাদুলি তাবিজ জলপড়া, তেলপড়া, ফলপড়া, চালপড়া, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ ভালো করতে চায়। এসব প্রচার তারা করে এবং এগুলো সেই সব গরীব খেটে খাওয়া মানুষের জন্য যাদের টাকা পয়সা নেই, দিন আনে দিন খায় তাদের জন্য। এরকম মানুষ বেশি এসবে বিশ্বাস করে নেয়, তাকে যারা শোষণ করে তারা আড়ালে থেকে যায়। এসব পড়ে অনেকে ভাববেন আমি ধর্ম মানি না, কখনো না আমার ধর্ম বিশ্বাস অন্য রকম আমি ধর্মান্ধ নই। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করি না, পূজ পাট সব থেকে বিরত থাকি না, কাউকে বিরত থাকতে বলিও না, মানুষের বিশ্বাস করি, অন্ধ ধর্ম বিশ্বাস করি না। ধর্মের নামে মানুষে মানুষে হানাহানি, ধর্মের নামে টাকা উপার্জন একদল মানুষের পেশা হয়ে গেছে। আজ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে শান্তির ধর্ম পালন করে মানুষ সত্য কি এটা শান্তির ধর্ম (ইসলাম ধর্ম ) কারণ পৃথিবীতে যত অপরাধ করে তার নব্বই শতাংশ মানুষ এই শান্তির ধর্মে (ইসলাম ) বিশ্বাস করে। যত উগ্রপন্থী বা জঙ্গি বা জেহাদি আছে তার 90 %এই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। এখন তো অন্যান্য ধর্মের মধ্যেও উগ্রপন্থা বেশি বেশি করে মাথা চারা দিচ্ছে। আমার কথা হলো, ধর্ম যদি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেয়, আর মানুষ মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে, সে তো সভ্যতার শত্রু ধর্ম তো এসেছিল মানুষকে এক করা বা রক্ষা করার জন্য। আমার তো মনে হয় না, কোন ঈশ্বর, আল্লাহ, গড তার সৃষ্টির সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ সে নিজের কর্তব্য পালন ভুলে একে অপরের সাথে লড়াই করে মরুক এটা চান না। আমার মনে হয় বর্তমানে ধর্ম মানুষের পাশে থাকার বদলে শত্রু হয়ে গেছে। আসুন সবাই মিলে ধর্ম কে বাড়িতে মন্দিরে মসজিদে গীর্জায় রেখে মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াই, এটাই এখন বড়ো ধর্ম। ধর্ম কে মানুষের শত্রু না করে,বন্ধু করি মানবতাই হোক ধর্ম।
Anulekhon.blogspot.com
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
বাঙালি ও বর্তমান ভারত।
(ছবিটি নেট থেকে নেওয়া, একটি স্ক্রিনশট।) স্বাধীনতার পূর্বে ভারত কীরকম ছিল, ১৯৪৭ সালে ভাগ হওয়ার পর কেমন হয়েছে। কেন ভারত ভাগ করা হয়েছিল সে ...

-
সরস্বতী পুজোর পদ্ধতি, পরপর যা করতে হবে।১)আচমন ২)বিষ্ণু স্মরণ ৩)স্বত্ত্বি বাচন ৪) স্বত্ত্বি সূক্ত ৫) সাক্ষ্য মন্ত্র ৬) বরণ ৭) সংকল্প ৮) স...
-
আমি এর আগে একটি ব্লগে লিখেছি, দুর্গা যষ্টী পূজার মন্ত্র ।এখানে বলি আমি পণ্ডিত নই, বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে, আর দু একজন ব্রাহ্মণের সাথে কাজ ...
-
ছবি টি কীসের বা কোন প্রাণীর নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। মানুষের প্রথম পোষ মানা প্রথম প্রাণী, হয়তো অনেকেই পড়ে বলবেন এবার নতুন কী এতো আমরা স...
No comments:
Post a Comment