বেশ কয়েক দিন ধরেই নেট মিডিয়াতে দেখছি, পায়েল রোহিতগী নামে এক ভদ্র মহিলার সতী দাহ নিয়ে লিখেছেন, সেই লেখা নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে। ঐ লেখার সাথে তিনি রাজা রামমোহন রায় কে ব্রিটিশদের চামচা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন সতী দাহ প্রথা সঠিক ছিল, উনি ইতিহাস না জেনে মন্তব্য করেছেন। আবার বলছি আপনি ইতিহাস পড়ুন তখন কার হিন্দু সমাজে মেয়ে দের সাথে কী রকম আচরণ করা হতো, না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়। আপনি আজ যে ভাষায় লিখেছেন, ঐ ইংরেজি ভাষা তো দূর লেখা পড়া করার অধিকার ছিল না, বারো বছরের মধ্যে জাত কুল দেখে মেয়েদের বিয়ে দিতে হতো, ৯ হলে গৌরী দান, পর্দাসীন মেয়ে দের বাড়ির বাইরে যাওয়ার অধিকার ছিল না। তীর্থ স্নান করতে নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকা পালকি করে, পালকি সহ জলে চুবিয়ে বা ডুবিয়ে তুলে আনা হতো, আর কুল রাখতে বিয়ে দেওয়া হতো নয় বছরের কন্যার সাথে ষাট থেকে আশি বছরের বৃদ্ধর সাথে, বৃদ্ধ মারা গেলে যত গুলো তিনি বিবাহ করতেন, এবং সেই বৌ দের মধ্যে যাদের হাতের কাছে পাওয়া যেত, তাদের জোর করে চিতায় তুলে দিয়ে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। ভাববেন একটা ১২ থেকে তেরো বছরের মেয়ে, আশি বছরের স্বামীর মৃত্যুর জন্যে তাকেও জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হবে, এটা আপনার কাছে সু প্রথা। আপনি যে আজ লেখা পড়া শিখে টুইটারে ইংরেজি ভাষায় লিখেছেন, মেয়েদের এই শিক্ষার অধিকার দেওয়ার জন্য সমাজের বিপরীতে গিয়ে লড়াই করে ছিলেন, সেই রকম এক জন মহান ব্যক্তি হলেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি এক ঈশ্বর বাদ প্রচার করে ছিলেন, ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সমাজ ব্যবস্থা পাল্টাতে হলে সরকারের সাহায্য দরকার হয়, সেই জন্য তিনি ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য নিয়ে ছিলেন, এরকম আরেক জন মহান বাঙালি যিনি মেয়েদের শিক্ষার জন্য নিজের সর্বস্ব দান করে দিয়ে ছিলেন। তিনি ঈশ্বর চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ার সাগর, বিদ্যাসাগর, আরেক সমাজ সংস্কারক স্বামী বিবেকানন্দ ,তিনি বলেছিলেন, সমাজের দুটি ডানা নারী ও পুরুষ একটি ডানা অকেজো হলে পাখি যেমন উড়তে পারে না, সেই রকম সমাজের এই দুটি ডানার একটি অকেজো হলে সমাজ ব্যবস্থা কোনো দিন টিকে থাকতে পারে না। তৎকালীন সমাজ সংস্কারের অগ্রনী এই সব মহান ব্যক্তির সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করা উচিত হয়নি। মনে রাখতে হবে বাঙালি তথা গোটা ভারতের শিক্ষা সমাজ ব্যবস্থা ধর্মান্ধতা।হিন্দু দের মধ্যে ছোট জাত উঁচু জাত যা এখনও সমাজ ব্যবস্থা কে তথা হিন্দু জাতিকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। এই কিছুদিন আগে মুম্বইয়ের একটি মেয়ে ডাক্তারি পড়ছিল, প্রতি নিয়ত তার দিদি রা নীচু জাত বলে খোঁটা দিত, সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। রোহিত ভেমুলা, একই রকম, ভাবে মারা গিয়েছেন। আর যদি বলেন, আমি বাঙালি সমাজ সংস্কারক রামমোহন রায় কে মানি না। তাহলে আপনার অভিভাবক কে বলুন, আপনার কুল রাখার জন্য আশি বছরের বৃদ্ধের সাথে বিয়ে দিতে, তিনি মারা গেলে - - - - -.।
Anulekhon.blogspot.com
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
বাঙালি ও বর্তমান ভারত।
(ছবিটি নেট থেকে নেওয়া, একটি স্ক্রিনশট।) স্বাধীনতার পূর্বে ভারত কীরকম ছিল, ১৯৪৭ সালে ভাগ হওয়ার পর কেমন হয়েছে। কেন ভারত ভাগ করা হয়েছিল সে ...

-
সরস্বতী পুজোর পদ্ধতি, পরপর যা করতে হবে।১)আচমন ২)বিষ্ণু স্মরণ ৩)স্বত্ত্বি বাচন ৪) স্বত্ত্বি সূক্ত ৫) সাক্ষ্য মন্ত্র ৬) বরণ ৭) সংকল্প ৮) স...
-
আমি এর আগে একটি ব্লগে লিখেছি, দুর্গা যষ্টী পূজার মন্ত্র ।এখানে বলি আমি পণ্ডিত নই, বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে, আর দু একজন ব্রাহ্মণের সাথে কাজ ...
-
ছবি টি কীসের বা কোন প্রাণীর নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। মানুষের প্রথম পোষ মানা প্রথম প্রাণী, হয়তো অনেকেই পড়ে বলবেন এবার নতুন কী এতো আমরা স...
No comments:
Post a Comment