এখানে বলে রাখি আমি পণ্ডিত নই, কিন্তু বিভিন্ন বই থেকে পড়ে যেটা জেনেছি সেটা এখানে লিখব। পণ্ডিত গন যদি পড়েন নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন। প্রতিটি পুজারি পুরোহিত বা ব্রাহ্মণ বাড়িতে এই শিলা আছে, এই শিলায় নিত্য সেবা দেওয়া এবং তুলসি পাতা দেওয়া হয়। অনেকেই এটি কে নারায়ণ শিলা বা শালগ্রাম শিলা বলে থাকেন। কোন কোন ব্রাহ্মণ বাড়িতে একের অধিক শিলা আছে, কারণ বলে থাকেন বাড়ির বাইরে পুজো করতে নিয়ে যেতে হবে সে কারণেই এতো গুলো শিলা। তবে আমি যতদূর জানি দুই বা তার অধিক এই শিলা রাখতে নেই, ফাটা শিলাও রাখতে নেই। শিলা পুজোর সময় যা সহজে করা যায় সেই টুকু এখানে লিখব। কারণ অনেকেই আছেন কাজে যাবার আগে এবং সন্ধ্যা বেলায় এসে এই শিলা কে সেবা দেন। সকালের সেবা দেওয়ার সময় কম পান সেই কারণেই আমি যতদূর জানি সেটাই এখানে লিখছি।এখানে বলে রাখি ব্রাহ্মণ ছাড়া এই শিলা পুজোর কারও অধিকার নেই। মহিলারা এই শিলা পর্শ্ব করবে না। বিঃ দ্রঃ :- শিলায় পুজার আগে সিংহাসন থেকে নামিয়ে একটি তামার পাত্রে রাখুন নীচে একটি তুলসী পত্র অবশ্যই দেবেন। সেটা আগের দিনের তুলসী পত্র হতে পারে। আর ঘি ও মধু শিলায় মাখিয়ে নিন ।
তুলসি ফুল তুলে নিন, নারায়ণ পুজোর জন্য সাদা টগর এবং সাদা কুন্দ ফুল হলে ভালো হয়।
তুলসি পাতা তোলার মন্ত্র :- তুলসি পত্রং সদা ত্বং কেশব প্রিয়। তুলসি পত্র ছিন্ন স্মসি স্বাহা। ( সব থেকে কম দুটি তুলসি পত্র তুলে নেবেন।)
এবার যা যা করতে হবে। ১) আচমন ২) বিষ্ণু স্মরণ ৩) সংক্ষেপে পঞ্চ দেবতা কে দান। ৪) ধ্যান ৫) স্নান করানো ৬) গাত্র মোছানো ৭) তুলসি দান ৮) আবরণ ও সাথি দেবতা কে ফুল দেওয়া। ৯) নারায়ণ কে পঞ্চ উপাচার দেওয়া। ১০) প্রণাম মন্ত্র ১১) ক্ষমা প্রার্থনা। এর পর ঘরে লক্ষী মূর্তি থাকে তাহলে তার পুজো একই ভাবে কেবল স্নান ও গাত্র মোছানো বাদ দিয়ে। আর যদি মূর্তি নাও থাকে তাহলেও লক্ষী কে নিবেদন করে দেওয়া।
আচমন :- কোশা থেকে কুশি করে গঙ্গা জল মাশ কলাই ডুবতে পারে এতটুকু ডান হাতের তালুতে নিয়ে, তিন বারের বলুন ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ।
বিষ্ণু স্মরণ :- ওঁ তদ্বোবিষ্ণু পরম পদং সদা পশ্যন্তি সুরয় দ্বিবীব চক্ষু রতাতম। ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ।
সংক্ষেপে পঞ্চ দেবতার পুজো :- এতে গন্ধেদিবেভ্য বং এতেস্মৈ পঞ্চ দেবগনভ্য নমঃ । এষো গন্ধ পঞ্চ দেবগনভ্য নমঃ ।এতৎ পুষ্প পঞ্চ দেবগনভ্য নমঃ ।এষো ধূপ পঞ্চ দেবগনভ্য নমঃ ।এষো দীপ পঞ্চ দেবগনভ্য নমঃ । এতৎ অক্ষত নৈবেদ্যম পঞ্চ দেবগনভ্য নমঃ ।
ধ্যান :- ওঁ ধেয় সদা সবিত্র মণ্ডল মধ্যবর্তী নারায়ণ। সরজিসান সন্নিবেষ্ট কেয়ূরবান কনক কুণ্ডলবান। কিরীটিহারি হিরণ্ময় বপু ধৃত শঙ্খ চক্র।
স্নান :- জল শঙ্খের জলে কম করে তিন বার সবচেয়ে বেশি পাঁচ বার বা সাত বার। তার আগে পানি শঙ্খের জলে তীর্থ আহ্বান করে নিন।
তীর্থ আহ্বান মন্ত্র :- ওঁ গঙ্গোদা সরতিশ্চ সর্বা সমুদ্রাশ্চ সংরসি চ ।আয়ন্তু অয়ম দূরিত ক্ষয় কারক। ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব্য গোদাবরী সরস্বতী নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলোস্মিন সন্নিধিং কুরু ।
এবার স্নান মন্ত্র :- ওঁ সহস্র পুরুষ সহস্র শীর্ষ সহস্র পাত ত্বয়া বৃত্তা পৃথ্বী । অত্রাতিষ্ঠত শাল্গমঃ ইদং স্নানীয়োদকং ওঁ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ ।
এই মন্ত্রে তিন বার পাঁচ বার স্নান করাতে হবে
গাত্র মার্জন :- ইদম গাত্র মার্জনাথায় ওঁ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ । ওঁ নারায়ণ ধীমহী বিষ্ণবে প্রচোদয়াৎ ওঁ ।
এবার একটা তুলসি পত্র নিয়ে মসৃণ দিকটা চন্দন লাগিয়ে নিয়ে দিতে হবে। এবং এই মন্ত্রে দিতে হবে। ইদং তুলসী পত্রং ওঁ নমঃ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ । এবার সিংহাসনে রাখুন ঘন্টা বাজাতে বাজাতে দ্বিতীয় তুলসী পত্র টি একই ভাবে একই মন্ত্র বলে উপরে দিন। এবার নিম্ন লিখিত মন্ত্রে একটি করে ফুল দিন।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ নারদাদি পার্শ্ব দেবভ্য নমঃ ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশদিকপালভ্য নমঃ ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ মৎস্যাদি দশ অবতারভ্য নমঃ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ গরুর বাহনায় নমঃ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ শঙ্খায় নমঃ ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ চক্রায় নমঃ ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ গদায় নমঃ ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ পদ্মায় নমঃ ।
এতে গন্ধে পুষ্পে ওঁ বাস্তু পুরুষায় নমঃ ।
এষো গন্ধ ওঁ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ ।
এতৎ পুষ্পম ওঁ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ ।
এষো ধূপ ওঁ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ ।
এষো দীপ ওঁ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ ।
এষো অক্ষত নৈবেদ্যম মিষ্টান্ন ওঁ নারায়ণ শ্রী বিষ্ণবে নমঃ ।
(আতপ চাল দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে রাখবেন এখানে কেবল আতপ চাল ও বাতাস বা সন্দেশ দিতে পারেন।)
এবার প্রণাম মন্ত্র :- ওঁ নমহ ব্রহ্মণ দেবায় গো ব্রাহ্মণায় হিতায়চ জগৎ ধৃতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নারায়ণ নমহস্তুতে ।
ক্ষমা প্রার্থনা :- ওঁ যৎ ক্ষরং মাত্রা হীনচ , যদভবতে। পূর্ণ ভবতু তৎ প্রাসাদৎ সুরেশ্বর ।ওঁক্ষমস।
এবার লক্ষীর পুজো করতে হবে কারণ বাড়িতে পুজো করছেন। নারায়ণ কে পুজোর পর লক্ষী পুজো অবশ্যই করা কর্তব্য।
লক্ষীর ধ্যান :- ওঁ পাশাক্ষ মালিকাম্বজ শৃন্নি ভৃয্যমৌ সৌময় ।পদ্মা সংস্থানং ধ্যায়েচ শ্রীয়ং ত্রৈলক্য মাতরম ।গৌরবর্ণং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার ভুষিতাম ।রৌক্মপদ্ম ব্যাগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু ।
এষো গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ নৈবেদ্যম ওঁ পেচকায়ৈ নমঃ ।একটি ফুল পেচকের উদ্দেশ্য দেবেন।
এষো গন্ধ ওঁ শ্রীং লক্ষী দেবৈ নমঃ।
এতৎ পুষ্পম ওঁ শ্রীং লক্ষী দেবৈ নমঃ ।
এষো ধূপ ওঁ শ্রীং লক্ষী দেবৈ নমঃ ।
এষো দীপ ওঁ শ্রীং লক্ষী দেবৈ নমঃ ।
এতৎ অক্ষত নৈবেদ্যম ওঁ শ্রীং লক্ষী দেবৈ নমঃ ।
এবার প্রণাম মন্ত্র :- ওঁ বিশ্ব রূপ ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে ।সর্বত্র পাহিমাং দেবী মহিলক্ষমী নমহস্তুতে।
ক্ষমা প্রার্থনা :- ওঁ গুজ্জাতি গুজ্জ গোপত্রী ত্বং গৃহনস্মাৎ কৃতং জপম, সর্বসিদ্ধি ভবর্তু মে দেবী তৎ প্রাসাদৎ সুরেশ্বরী।
No comments:
Post a Comment